মহীরুহের নাম ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়

রবার্ট এডওয়ার্ডস। ব্রিটেনের বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী। ‘ফাদার অফ দ্য টেস্টটিউব বেবি’ হিসেবে চেনে গোটা বিশ্ব।

১৯৭৮ সালে তাঁর গবেষণার ফল হিসেবে জন্ম হয় লুইস ব্রাউনের, পৃথিবীর সর্বপ্রথম টেস্ট টিউব শিশু।

লুইস ব্রাউনের জন্মের ঠিক ৬৭ দিনের মাথায় ভারতেও ঘটেছিল এক যুগান্তকারী ঘটনার।

কলকাতায় জন্ম হয়েছিল ‘দূর্গা’র।

পৃথিবীর দ্বিতীয় আর দেশের প্রথম টেস্টটিউব শিশু।

প্রথম আবিষ্কারক পুরস্কৃত হয়েছিলেন। সমাদৃত হয়েছিলেন নোবেলের মঞ্চে।

দ্বিতীয়জনের ‘পুরস্কার’ মৃত্যু।

অভিমা। অপমান। উপেক্ষা।

অসম লড়াইতে লড়তে লড়তে ক্লান্ত সৈনিক বেছে নিয়েছিল মৃত্যু।   

সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, ‘ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর জন্য আর অপেক্ষা করতে পারলাম না’

অমিত প্রতিভার অধিকারী এক মানুষ চিরতরে নিভে গিয়েছিলেন শুধু উপেক্ষায়। জীবত অবস্থায় যাঁর কদর হয়নি। বহু বছর পর এসেছিল সার্বজনীন স্বীকৃতি।

মৃত্যুর তিমিরে হারিয়ে যাওয়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের সেই মহীরুহের নাম ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

সূর্যকে কখনই আলোয় ঢাকা যায় না। সেই কথাই সত্য হয়ে ফিরে এসেছিল তাঁর জীবনে।

ছ’তলার ওপর দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটটাকেই করে তুলেছিলেন ল্যাবরেটারি। সেখানে চলত নতুন পদ্ধতিতে প্রাণ আনার চর্চা।

গবেষণার প্রতি টান ছিল ছাত্রজীবন থেকেই। জীবন এগিয়েছিলেন সেই পথেই।

কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে তিনি ফিজিওলজিতে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর রিপ্রোডাকটিভ ফিজিওলজিতে পিএইচডি করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা রিপ্রোডাকটিভ এন্ডোক্রায়োনলজির  থেকে দ্বিতীয় ডক্টরেট ডিগ্রি।  

বিদেশে প্র্যাকটিস আর গবেষণা দুইয়ের সুযোগই পেয়েছিলেন। কিন্তু ভুলতে পারেননি দেশের মাটির টান।

ফিরে আসেন কলকাতায়। নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে শুরু করেন কর্মজীবন।

চোখ কিন্তু গবেষণাতেই। হাসপাতালের ডিউটি শেষ করে বাকিটা সময় বাড়ির ল্যাবে।

ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন নিয়ে কাজ করতেন। সাধারণের ভাষায় ‘টেস্ট টিউব বেবি’।

তাঁর সমকাল তাঁকে স্বীকৃতি দেয়নি। মৃত্যুকে আপন করতে করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু যুগান্তর তিনি এনেছিলেন। তা মেনে নিতে বাধ্য হয় দেশ এবং রাষ্ট্র।

আর তার গল্প হার মানায় সিনেমার চিত্রনাট্যকেও।

ডাক্তার মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর  সামনে আসে তাঁর গবেষণার নথিপত্র। চমকে যায় বিজ্ঞানী মহল।

দেরীতে হলেও তাঁর স্মৃতি  উজ্জ্বল ভারতীয় বিজ্ঞান জগতে।  

তাঁর কাহিনী নিয়েই ছবি করেছিলেন তপন সিনহা। ‘এক ডক্তর কি মৌত’। সাধারণ মানুষ জেনেছিল লোকচক্ষুর আড়ালে নিরন্তর অপমান আর দহনে এক প্রতিভার শেষ হয়ে যাওয়ার কাহিনী।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...