ক্রুশ বিদ্ধ হলেন ঈশ্বরের সন্তান

আজ গুড ফ্রাইডে,অনেকে একে ব্ল্যাক ফ্রাইডে, হোলি ফ্রাইডে বা গ্রেট ফ্রাইডেও বলে থাকেন।  

কিন্তু যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিনকে কেন গুড ফ্রাইডে বা শুভ শুক্রবার বলা হবে তা নিয়ে প্রশ্নও ওঠে৷ এমন যন্ত্রণাদায়ক অবসানের মধ্যে 'শুভ' কোথায়? জার্মান-সহ বেশ কিছু জায়গায় এই দিনটিকে বেদনাময় শুক্রবার বলা হয়। তবে এমন নামকরণের একটা ব্যাখ্যা রয়েছে৷ খ্রিস্টধর্মের আদি পর্বের এই কাহিনি নিয়েও উপকথা জড়িয়ে রয়েছে। ইংরেজি নামটির একটি ব্যাখ্যা হল, এটি গড’স ফ্রাইডে’র পরিবর্তিত রূপ। আবার, পবিত্র বা ইংরেজি হোলি অর্থে প্রাচীন ইংরেজিতে ‘গুড’ শব্দটি ব্যবহৃত হত, নামটা সেখান থেকেও এসে থাকতে পারে।

রোমান রাজ্যপাল পন্টিয়াস পিলাতের বিচারসভায় যিশুর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ, সিজারকে রাজস্বদানে বাধা ও নিজেকে রাজা ঘোষণা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কারণ তাঁদের মনে হয়েছিল যিশু দাবি করছেন তিনি ‘ইশ্বরের সন্তান’।  সেই সময়ের শাসক বোঝেনি তাঁর মহিমা। তাঁকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করেছিল। তাই ঠিক করেছিল, প্রতিদ্বন্দ্বীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কাঁটার মুকুট মাথায় পরে যিশু বয়ে নিয়ে চলেছেন ভারী ক্রুশকাঠ। তাতেই ক্রুশবিদ্ধ করা হবে তাঁকে। তাঁকে ক্রুশ বহনে সাহায্য করেছিলেন সিমন। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পরে ছ'ঘণ্টা যিশু ক্রুশে যন্ত্রণা ভোগ করেন। বিশ্বাস করা হয় যে, যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দিনটি শুক্রবার ছিল। নিঃস্বার্থভাবে মানবতার জন্য তাঁর জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাই একেই গুড ফ্রাইডে বলা হয়।মৃত্যুর পর তার নিথর দেহ পাথরের সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু অলৌকিক ভাবে দুদিন পরে রবিবারে তাঁর রেজারেকশান বা পুনরুত্থান ঘটে।  

খ্রিস্ট ধর্মালম্বীরা মনে করেন, পাখি যেমন ডিমের খোলস ছেড়ে পৃথিবীর আলোয় আসে, তেমনিভাবেই যিশুও পুনুরুত্থিত হয়েছিলেন। পুনরুত্থানের সেই দিনটিকে বলা হয় ইস্টার সানডে। আর ইস্টার সানডের অন্যতম অংশ ইস্টার এগ।ডিম হল পুনর্জন্মের প্রতীক।তাই প্রতি ইস্টারের আগের শুক্রবার হল গুড ফ্রাইডে। যা গোটা বিশ্বের খ্রিস্ট সম্প্রদায় যথোচিত মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে।আর ইস্টার সানডে হল যিশুর পুনরুত্থানের দিন।সেদিন গোটা বিশ্বের খিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষজন অত্যন্ত উত্সাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করে থাকেন।

যিশুর বিচারের শাস্ত্রীয় বিবরণীগুলি থেকে জানা যায় যে তাঁকে সম্ভবত শুক্রবারে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। দুটি ভিন্ন গোষ্ঠীর মতে গুড ফ্রাইডের বছরটি হল ৩৩ খ্রিস্টাব্দ। সালটি নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে তা হয় ৩৩, না হয় ৩৪ খ্রিস্টাব্দ। মাসটি এপ্রিলই। আদি তারিখ ছিল ৩।
খৃষ্টীয় ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধকরণ, মৃত্যু ও সমাধিমন্দির থেকে তাঁর পুনরুজ্জীবনের স্মরণে এই উৎসবটি পালিত হয়। পবিত্র সপ্তাহে ইস্টার রবিবারের আগের শুক্রবারে প্যাস্কাল ট্রিডামের অংশ হিসেবে এই উৎসব পালিত হয়। অনেক সময়ই গুড ফ্রাইডে ইহুদিদের উৎসব পাসওভারের সঙ্গে একই দিনেও উদযাপিত হয়ে থাকে।

 

 

 


এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...