ধনতেরাসকে আবার ‘ধনত্রয়োদশী’ও বলা হয়। দিনের নামই বুঝিয়ে দেয় দিনটির "স্পেশালিটি"।
"ধন" মানে সম্পদ। দেবী মহালক্ষ্মী আর কুবেরের পুজো হয় এদিন।
কেন এইদিন কুবের দেবতার পুজো হয় তার কাহিনি জানতে হলে ফিরতে হবে পুরান যুগে।
পুরাণে কথিত আছে, একবার দুর্বাশা মুনির অভিশাপে দেবী লক্ষ্মী স্বর্গচ্যুত হন। তিনি সাগরে গিয়ে আশ্রয় নেন। অমৃত মন্থনের সময় দেবী উঠে আসেন সাগর থেকে।
এ প্রসঙ্গে অন্য একটি কাহিনীও পাওয়া যায়।
প্রাচীনকালে হিম নামে এক প্রজা বৎসল রাজা ছিলেন। ন্যায় এবং প্রীতি এই দুই ছিল তাঁর রাজ্য শাসনের মূল মন্ত্র। এহেন রাজার পুত্র সন্তান জন্ম নিলে রাজ জ্যোতিষী গণনা করে জানালেন, পুত্রের অকালমৃত্যুযোগ অবধারিত। ষোড়শ বর্ষে পা দিলেই তার সাপের দংশনে জীবন যাবে। ছেলের ভাগ্য ফেরাতে রাজা দেশ-দেশান্তরের জ্যোতিষীদের পরামর্শ নিতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত তাদেরই একজন রাজা হিমকে পরামর্শ দিল, কোন সুলক্ষণযুক্ত কোনও কন্যার সঙ্গে বিবাহ দিলে পুত্রের অকালমৃত্যু হয়ত রোধ করা সম্ভব হবে। ভাগ্যলিপিতে লেখা ছিল, বিবাহের চতুর্থ রাতে তার মৃত্যু হবে। তখন সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী স্বামীর প্রাণ রক্ষায় কী করবে ভেবে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের সমস্ত গহনা ঘরের দোরগোড়ায় স্তুপাকারে রেখে দোর আগলে বসে রইল। পাশে প্রদীপের আলো। স্বামীকে বল সাররাত যেন দু’চোখের পাতা এক না করে।
যমরাজ সাপের রূপ ধরে ঘরে প্রবেশ করতে গেলেন। দুয়ারে রাখা রত্নালংকারে তার চোখ গেল। ঘোর অন্ধকারের মধ্যে রত্নের আলোয় চোখে ধাঁধা লেগে গেল মৃত্যু দেবতার। সদ্য বিবাহিতা বধূ গান গাইতে শুরু করল। গানের যাদুতে বশ হয়ে গেল নাগরূপী যম। মোহিত হয়ে ওই দুয়ারে বসেই গান শুনতে লাগল সে। গান যখন শেষ হল ততক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে মৃত্যুর প্রহর। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ফিরে যেত হল যমরাজকে। এক সাধারণ কন্যার বুদ্ধির কাছে পরাজিত হলেন তিনি। জীবন বাঁচল হিমরাজ পুত্রের।
কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন নাকি এই কাহিনীর সূত্রপাত। তাই ধন আর বুদ্ধি দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল, তাই দিনটি পরিচিত হয়ে ওঠে ধনতেরাস নামে।
সোনা, রুপা, ধাতু কিনে উদযাপন চলে দিনটির।