ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাঙালির হৃদয়ে আসীন থাকবেন চিরকাল। বাঙালির জীবনে তাঁর অবদান ভোলার নয়। তাঁর মেধা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল এক অনন্য জগতে, তাছাড়াও সমাজসংস্কারক হিসেবে তিনি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন ঊনবিংশ শতকে। বিদ্যাসাগর জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে কর্মাটাঁড় নামক জায়গায় ১৪ বিঘে জমি নিয়ে বসবাস করেছিলেন। তাই একদা কর্মাটাঁড় স্টেশন এখন নামকরণ করা হয়েছে বিদ্যাসাগর স্টেশন নামে।
সেই স্টেশন সেজে উঠেছে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনের নানা পর্যায়ের রঙিন চিত্রে। প্ল্যাটফর্মের প্রাচীরের গায়ে একের পর এক ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে মনীষীকে। কোথাও তিনি ছোটবেলাকার বিদ্যাসাগর আবার কোথাও কর্মাটাঁড়ে আদিবাসীদের বন্ধু। এই জায়গায় বসেই তিনি সীতার বনবাস, বর্ণপরিচয় তৃতীয় সংস্করণের প্রুফ দেখেছেন। সেই সময় দলে দলে সাঁওতাল বিদ্যাসাগরের কাছে আসত ভুট্টা বিক্রি করার জন্য। কাজ শেষে ফেরার পথে বিকেলে তারা খেতে চাইত বিদ্যাসাগরের কাছে। ওদের থেকে কিনে রাখা ভুট্টাই দিতেন বিদ্যাসাগর। এই স্টেশনের সঙ্গেও তাঁর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এক সময় এখানে কোনো কুলি ছিলনা। একদিন এক যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে কুলি, কুলি বলে চেঁচাচ্ছিলেন। বিদ্যাসাগর সেই সময় কুলি সেজে তাঁর মাল বহন করেছিলেন। এই গল্পটা আমাদের অনেকেরই শোনা। সেটা এই স্টেশনেরই ঘটনা। এলাকার আদিবাসীদের হোমিওপ্যাথী চিকিৎসা করে তাঁদের কাছে জীবনদাতা ঈশ্বর হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর পরবর্তীকালে একটা স্কুলও হয়েছিল। এখন বাড়ির পেছনে একটি অতিথিশালা গড়ে তোলা হয়েছে।
নতুন করে ঈশ্বরচন্দ্রের স্মৃতিকে ধরে রাখার রেলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সকলেই। ১৯৮৮ সালে তদানীন্তন ডিআরএম অসীমকুমার মিত্র পরামর্শদাতা কমিটির সুপারিশে চিত্তরঞ্জন, কর্মাটাঁড়, জগদীশপুর স্টেশনে তৈলচিত্র আঁকিয়েছিলেন রেলকর্মী সহদেব দাসকে দিয়ে। চিত্তরঞ্জন দাস, ঈশ্বরচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র বসু ও কাজী নজরুল ইসলামের তৈলচিত্র লাগিয়েছিলেন স্টেশনে। এবারে আরো কিছু যোগ করা হল। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে পথ চলার অভিজ্ঞতা, তাঁর বিয়ে, সংস্কৃত কলেজে যোগদান ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। বাদুড়বাগানের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে রামকৃষ্ণের কথোপকথন রাখা হয়েছে ছবি হিসেবে। বিদ্যাসাগরের বাড়ি ও আদিবাসীদের সেখানে খাওয়ার দৃশ্য ছবির আকারে তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে বর্ণপরিচয় গ্রন্থের প্রচ্ছদের ছবি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও মনীষীর জীবনাবসানের দৃশ্যও রাখা হয়েছে দেওয়ালচিত্রে।
তাহলে আপনি এবারে চলে আসতেই পারেন ছুটির অবসরে এই জায়গাটিতে বিদ্যাসাগরের স্মৃতির পাতা থেকে কিছু উপাদান খুঁজে নিতে।