বাংলা নাট্য জগতের নক্ষত্র

বাংলা নাট্য জগৎ এর শ্রেষ্ঠ এক নক্ষত্র গিরিশ চন্দ্র ঘোষ। ১৮৪৪ সালের ২৮ ই ফেব্রুয়ারি কলকাতার বাগবাজারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, পরিচালক ও নট। কিন্তু তিনি নাট্যকার রূপে বেশি পরিচিত ও প্রশংসনীয়। সকলে মনে করেন বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণ যুগ তারই অবদানে। চাকরি করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নানা বিষয়ে অধ্যয়ন করা শুরু করেন। ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্তের প্রভাবে তিনি গান ও কবিতা লিখতে শুরু করেন। এবং এর পরবর্তীকালে তিনি বাংলা নাট্য মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হন ও নাটক লিখতে শুরু করেন। ১৮৬৭ সালে বাগবাজারের নাট্যদলের প্রযোজিত মধুসূদন দত্তের 'শর্মিষ্ঠা' নাটকের গীতিকার হিসাবে তিনি বাংলা নাট্য জগৎ এ যোগদান করেন। এরপরে তিনি দীনবন্ধু মিত্রের 'সধবার একাদশী' নাটকে নিমচাঁদ চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৮৭২ সালে তিনি বাগবাজারে ন্যাশনাল থিয়েটার দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলে অভিনয় আরম্ভ করেন।

     বাংলা নাট্য জগৎ এর শ্রেষ্ঠ নক্ষত্র গিরিশ চন্দ্র ঘোষ এবং এই দলের বেশ কিছু সদস্য মত পার্থক্যের জন্য ন্যাশনাল থিয়েটার দল ত্যাগ করেন। এরপর ১৮৮০ সালে তিনি গ্রেস ন্যাশনাল থিয়েটারের ম্যানেজার হন। ১৮৭৭ সালে তার লেখা প্রথম মৌলিক নাটক আগমনী মঞ্চে অভিনীত হয়। ১৮৮২ তে স্টার থিয়েটার উদ্বোধন হয় তার নাটক দক্ষযজ্ঞ মধ্যে দিয়ে। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি ভক্তি মূলক নাটক করেন সেগুলি হল নল দময়ন্তী, শ্রীবৎস চিন্তা প্রভৃতি। এরপর ১৮৮৩ সালের ২ রা আগস্ট মঞ্চস্থ হয় তার চৈতন্যলীলা১৮৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর স্টার থিয়েটারে গিরিশ চন্দ্রের চৈতন্যলীলা নাটকটি অভিনয় দেখতে আসেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বিনোদিনীর চৈতন্যচরিত্রে অভিনয় দেখে তিনি মুগ্ধ হন এবং বিনোদিনীকে আশীর্বাদ ও করেন। এই ঘটনা দেখে গিরিশ চন্দ্রের মনে আসে বিরাট পরিবর্তন। এবং তিনি রামকৃষ্ণ দেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি বহু পৌরাণিক ও ভক্তিমূলক নাটক ও রচনা করেন। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক মূলক তার রচিত নাটক মোট ৮০। এই  নাটক গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল সীতার বনবাস (১৮৮১),অভিমন্যুবধ (১৮৮২),সীতাহরণ (১৮৮২),পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস (১৮৮২), প্রফুল্ল (১৮৮৯), জনা (১৮৯৪), আবু হোসেন (১৮৯৬), বলিদান (১৯০৪), সিরাজদ্দৌলা (১৯০৫), মীরকাশিম (১৯০৬), ছত্রপতি শিবাজী (১৯০৭), শংকরাচার্য (১৯১০), প্রভৃতি। উপরিউক্ত নাটকগুলি ছাড়াও তিনি ১৮৯৩ সালে তিনি শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ নাটকটি অনুবাদ করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের মৃণালিনী, দুর্গেশনন্দিনী, বিষবৃক্ষ প্রভৃতি উপন্যাস মধুসূদন দত্তের মেঘনাথ বধ কাব্য,নবীনচন্দ্রের পলাশীর যুদ্ধ কাব্য গুলির নাট্যরূপ গিরিশচন্দ্র দেন। তিনি বহু নাটকে  অভিনয়ও  করেছেন। তিনি বহু অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে একটি অভিনয় স্কুল-ও গড়ে তোলেন। মধুসূদনের চৌদ্দ মাত্রার অমিত্রাক্ষরের ছন্দ কে ভেঙে তিনি অভিনয়ের উপযোগী ভিন্ন ভিন্ন ছত্রে বিভক্ত করেন। তিনি তার নামকরণ করেন গৈরিশ ছন্দ। ২৪ বছর ধরে স্টার, এমারেন্ড, মিনার্ভা, ক্লাসিক, প্রভৃতি রঙ্গালয়ে পরিচালনার পর তিনি মিনার্ভার নাট্যাধ্যক্ষ রূপে যোগ দেন। ১৯১২ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারি  আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি। বাংলা নাট্য জগৎ এর বড় শুন্যতা তৈরী হয়। বড় এক শিল্পী কে হারায় বাংলা নাট্য জগৎ।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...