গ্যালিলিও বলেছিলেন সূর্য নয়, পৃথিবীই গতিবান। সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন ঘুরে চলেছে সে। সরাসরি ধর্ম যাজকদের বিরোধীতা ছিল তাঁর বক্তব্যে। সেই বিরোধীতার দাম দিতে হয়েছিল তাঁকে। ঠিক যেভাবে দাম দিতে হয়েছিল আরও একজনকে। তিনিও ইতালির ভূমিপুত্র। দর্শন আর বিজ্ঞান এই দুই ছিল তাঁর জীবনের ভরকেন্দ্র।
নাম তাঁর জিয়োর্দানো ব্রূনো।
জিয়োর্দানো বিশ্বাস করতেন, পৃথিবী সজীব। প্রাণবান। তার আত্মা আছে। তার জেরেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।
তাঁর এই বক্তব্য আঘাত হেনেছিল খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের দ্বারা প্রচারিত বিশ্বাসে। তাদের কাছে জিয়োর্দানোর বক্তব্য ছিল সরাসরি বাইবেল বিরোধীতা। যুক্তি দিয়ে খন্ডন করতে চেয়েছিলেন তাদের ভ্রান্ত তত্ত্ব।
খুব ভয় পেয়েছিল ধর্মগুরুরা। তারা আশঙ্কা করেছিল ব্রুনোর মতবাদ ছড়িয়ে পড়লে পৃথিবী ধর্মজ্ঞান ভুলবে। মানুষ আর যাজকদের কথা মানতে চাইবে না।
১৫৯২ সালের ২২ মে জিয়োর্দানোকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে ভেনিশিয়ান ইনকুইজিশনের মুখোমুখি করা হয়। ইনকুইজিশন হল রোমান ক্যাথলিক গির্জার একটি বিচার ব্যবস্থা, যেখানে ধর্ম অবমাননাকারীদের বিচার করা হতো। ব্রুনো খুব দক্ষতার সাথে তাঁর বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন ও তাঁর বিরোধীতাকারীদের যুক্তি খণ্ডন করেন। বেশ কয়েক মাস ধরে জেরা চলার পর ১৫৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে রোমে পাঠানো হয়।
রোমান ইনকুইজিশনের ইনকুইজিটর কার্ডিনাল বেলারমাইন জিয়োর্দানোকে তাঁর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু জিয়োর্দানো তা করতে অস্বীকার করেন। ১৬০০ সালের ২০ জানুয়ারি পোপ অষ্টম ক্লেমেন্ট জিয়োর্দানোকে ধর্মদ্রোহী বলে রায় দেন। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হয়।
রায় শুনে ব্রুনো বিচারকদের শাসিয়ে দিয়ে বলেন, "আপনারা হয়ত আমার কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে আমার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছেন। আমি এটি গ্রহণ করলাম।
তাঁর মৃত্যুদণ্ড নজিরবিহীন ভাবে কার্যকর করা হয়।
বিচারকের হুকুম - তাঁর রক্তের এক ফোঁটাও যেন পৃথিবীর মাটিতে না মেশে। তাই পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত।
গোটা শরীরের সঙ্গে তাঁর জিভেও শিকল বাঁধা হয়েছিল।
মৃত্যুদণ্ডের দিনটি যেন উৎসব। লোকে লোকারণ্য। তবু নিজের বক্তব্য থেকে একচুল সরেননি তিনি।
যুক্তির যুদ্ধে জিত তাঁর হয়েছিল। বিজ্ঞানের সঙ্গে দর্শনকে মেলাতে চেয়েছিলেন। আজও তাই সারা পৃথিবীর যুক্তিবাদী মানুষদের কাছে তিনি প্রাণের মানুষ।
মৃত্যুর ৪২১ বছর পেরিয়েও জিয়োর্দানো এক অন্তহীন প্রাণ...এমনই এক ফেব্রুয়ারিতে তাঁর চলে যাওয়া।