দেশের প্রাচীনতম বৌদ্ধ স্তুপ 'সাঁচি স্তুপ'

পাথর দ্বারা নির্মিত ভারতের প্রাচীনতম স্থাপত্য হল 'সাঁচি স্তুপ'। মৌর্য সম্রাট অশোক গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের উপর এই স্তুপটি তৈরি করেছিলেন। অশোকের স্মৃতি হিসেবে আজও স্তুপের উপর একটি অশোক স্তম্ভ দেখতে পাওয়া যায়। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় অব্দে সম্পূর্ণ বালি পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল 'সাঁচি স্তুপ'। তবে অশোকের নির্মান করা স্তুপটি সংস্কারের অভাবে ভগ্নস্তুপে পরিণত হয়েছিল। তাই অগ্নিমিত্র স্তুপটি আবার নির্মাণ করেন। নতুন স্তুপটি আয়তনে আরও বড় ছিল।

'সাঁচির স্তুপ'টিকে আলোকিত করার প্রতীক বলা হয়। বর্তমানে 'সাঁচির স্তুপ'টি লম্বায় ১৬.৫ মিটার ও ব্যাসে ৩৬ মিটার দীর্ঘ। এই স্তুপে বিভিন্ন ধরনের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে বুদ্ধের জীবন কাহিনী, ধর্মপ্রচারের বিভিন্ন ঘটনা, বুদ্ধের জন্ম ও সাতটি অবতারকে দেখতে পাওয়া যায়। স্তুপের উপরিভাগ কিছুটা গ্ৰিক ও রোমান মন্দিরের মতো দেখতে। স্তুপের ডান দিকে একটি মন্দিরের ভগ্নাবশেষ রয়েছে। ৬০৬ খ্রিষ্টাব্দের বেশ কিছু মন্দির নির্মাণ হয়েছিল এই স্থানে যার মধ্যে এই মন্দিরটি অন্যতম। সেই সময় এই স্থানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। তারপর উনবিংশ শতাব্দীর দিকে এই এলাকা সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত এলাকায় পরিণত হয়। তারপর ১৮১৮ সালে এই স্তুপটি আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ জেনারেল টেলার।

ব্রিটিশ আমলে ধনরত্নের খোঁজে এই স্তুপটি খুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। যার ফলে স্তুপটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভোপালের রাজ পরিবারের সদস্য বেগম সুলতান জাহান বিপুল অর্থ সাহায্য করেন এই স্তুপটি সংস্কারের জন্য। সেই সময় এই স্তুপটি সংস্কারের জন্য প্রায় পনেরো হাজার পাউন্ড খরচ করা হয়েছিল। তাছাড়াও সাঁচি স্তুপ নিয়ে বই ছাপাতে খরচ হয়েছিল আরও পঁচিশ হাজার টাকা। বর্তমান সময় ভারতীয় সাংবিধানে জাতীয় চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই 'সাঁচি স্তুপ'-এর অশোক স্তম্ভটি। ব্রিটিশদের শাসনকালেই সাঁচি স্তুপের রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হয়। ধীরে ধীরে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন রূপে পরিচিতি পায় এই স্তুপ। সড়ক, রেল পথে সাঁচি স্তুপ দর্শন করতে আসা যায়। মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত 'সাঁচি স্তুপ'-দেখতে আসার সঠিক সময় হল গ্ৰীষ্মকাল। তাই নভেম্বর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় এখানে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...