পরিপাকতন্ত্রের সঙ্গে মনের টান

চারমূর্তি সিনেমায় টেনিদার সেই মাছের মুড়ো খাওয়ার দৃশ্য বর্তমান সময়ে ক্যালোরিবিহীন ডায়েট আর স্লিম থাকার প্রচেষ্টার ভিড়ে রীতিমতো বিরল। আহারের তালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন আর ফ্যাটের সঠিক পরিমাণএর দাঁড়িপাল্লায় কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া বিষয়টা জীবন্ত জীবাশ্মের মতোই দুষ্প্রাপ্য। তবে এই নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট প্রয়োজনীয় বর্তমান জীবনধারণে। ওবেসিটি, গ্যাস্ট্রাইটিসের চোখ রাঙানিতে নির্দিষ্ট তালিকা,নিয়ম, ক্যালোরি মেনে খাওয়া নিছক বিলাসিতা নয় আর। তাই দামোদর শেঠদের দেখা মেলা ভার এখন। জিভে জল এসে যাওয়া খাবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলেও তারা স্বাদকোরক অবধি পৌঁছনোর সুযোগ পায় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। তবে এইসব নিয়ম-শৃঙ্খলা ভাঙার খানিক সুযোগ পাওয়া যায় একমাত্র বেড়াতে গেলে। বেড়ানো মানেই মুক্তির স্বাদ। আর সে স্বাদে যদি সুস্বাদু খাবার যোগ হয় তাহলে কথাই নেই। নিয়ম শৃঙ্খলা তখন শিকেয়। নিত্যদিনের নিয়মানুবর্তিতার সাময়িক ছুটি। তাই মনের কথা মেনে রসনা তৃপ্তির ব্যবস্থা করার মধ্যেই খাদ্য রসিকরা খুঁজে নেন স্বর্গসুখ। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব হয়ে পশ্চিম পর্যন্ত রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খাদ্যতালিকা ডায়েটের কারাগারের বাইরে উপভোগ করার একমাত্র উপায় এই বেড়াতে যাওয়া। আর সেই সুযোগ উপভোগ করতেই বেড়াতে যান অনেকেই। যেমন, অন্ধপ্রদেশের ভাইজ্যাগ অঞ্চলের আরাকু উপত্যকায় সেখানকার আদিবাসীদের তৈরি বাঁশ পোড়া মাংস খাওয়ার জন্য বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বর্ষাকালে ইলিশ উৎসবের অপেক্ষা শুধুমাত্র বাঙালিরাই করেন না। তার বিস্তার সারা পৃথিবী জুড়ে। সকল মৎস্য প্রেমী মানুষদের কাছে। দীঘার সামুদ্রিক মাছের সুস্বাদ বা দার্জিলিংয়ের পাহাড়ী মোমোর নস্ট্যালজিয়া খাদ্যপ্রেমী মানুষদের কাছে অমোঘ আকর্ষণ। আবার দার্জিলিংয়ের চাএর সুঘ্রানে ছুটে আসা পর্যটকএর সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাঙালির শেষ পাতে মিষ্টি না হলে চলে না। এই রাজ্যে বিভিন্ন জেলার প্রসিদ্ধ মিষ্টি পর্যটকদের মন জয় করে আসছে অনেকদিন ধরে। অতিরিক্ত ক্যালোরি আর মিষ্টি সমার্থক হলেও মিষ্টির কদর তাতে কমেনি একটুও। বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে আর বাঙালি খাদ্য রসিক। এই দুই বিশেষত্ব মিলে মন ও জিহ্বাকে একসঙ্গে খুশি করে চলেছেন অনেক বাঙালিই। ভ্রমণে রসনা তৃপ্তিও এক ধরনের ডানা মেলা।প্রতিদিনের গতানুগতিকতায় যে একঘেয়েমি আর বিষন্নতার বীজ লুকিয়ে থাকে খাদ্য রসিকতা তাকে মহীরুহে পরিণত হতে দেয় না। ডার্ক চকলেট হৃদয়কে ভালো রাখে, কোলেস্টেরলকে দুষ্টুমি করতে দেয় না এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে খুঁতখুঁতে মানুষরা বড়ই অসুবিধার মধ্যে পড়েন। যেমন, সকালে চা সহযোগে আয়েশ করে সুস্বাদু প্রাতরাশ যাঁদের অভ্যেস তাঁরা এক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়েন কখনো কখনো। বেড়ানোর নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে সঠিক সময়ে পৌঁছতে গিয়ে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে। তবে সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাঁরা পরে তাঁদের জিহ্বাকে ঠিকই খুশি করে নেন। জিহ্বা আর মনের সংযোগ বড়ই গভীর। নিরামিষাশী মানুষরা আমিষ প্রধান জায়গায় গেলে অসুবিধায় পড়েন। উল্টোটাও সত্যি। এ বিষয়ে সবচেয়ে ভাগ্যবান যাঁরা এসব আমিষ, নিরামিষের ঊর্ধ্বে গিয়ে খাওয়া বিষয়টাকে উপভোগ করতে জানেন। ভ্রমণের হুল্লোড় ও খাওয়া-দাওয়া সমানতালে চলতে থাকে। তবে পেট রোগা মানুষদেরও খুব মুশকিল হয়। সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে ওঠে ওষুধ। অভ্যেস যেমনই হোক না কেন,খাদ্য রসিক মানুষের ক্ষেত্রে ভ্রমণের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া যে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে তা অনস্বীকার্য। ক্যালোরিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর এমন মোক্ষম সুযোগ সচরাচর হাতছাড়া করেন না তাঁরা।

deer-body

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...