ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ছোট থেকেই রাগ ছিল এই দক্ষিণী মেয়ের। বাবা রামনাথ রাজ্যের রাজা চেল্লামুথু বিজয় রঘুনাথ সেতুপতি এবং মা রানী সাকান্দিমুথাল। ভেলু নাচিয়ার ছোট থেকেই মানুষ হয়েছিলেন রাজকুমারীর মত করে।
মেয়েবেলা থেকেই তাঁকে অস্ত্র-শস্ত্র শিক্ষার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন বাবা। ভারতের ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্ধে রানী হিসেবে তিনি প্রথম লড়াই করেছিলেন।
ছোট থেকেই মেয়ের সাহস দেখে ভেলু নাচিয়ারকে বাবা সমস্ত সামরিক যুদ্ধ কৌশল শিখিয়েছিলেন। এমনকী ঘোড়া চালানো, তীর চালনা ইত্যাদিতেও শিক্ষিত করেছিলেন। পড়াশোনাতেও আগ্রহ ছিল এই ছোট মেয়েটার। দক্ষিণী ছাড়াও বহু ভাষা শিখেছিলেন তিনি সে সময়।
বাবার কাছে একটাই আবদার ছিল মেয়েটার। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। বাবাও তাই সবরকম শিক্ষা দিয়ে মেয়েকে সেই মতো তৈরি করেছিলেন। শিবগঙ্গাইয়ের রাজাকে বিয়ে করেছিলেন ভেলু নাচিয়ার। তাঁর স্বামীও একজন লড়াকু রাজা ছিলেন। স্বামীর অনুপ্রেরণাতেও ভেলু নাচিয়ার ব্রিটিশদের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এদিকে দক্ষিণ ভারতে তখন ব্রিটিশদের অবস্থা বেশ সঙ্গীন। ব্রিটিশ সৈন্য এবং আর্কটের নবাবের পুত্র তখন ষড়যন্ত্র করলেন ভেলু নাচিয়ারের স্বামীকে হত্যা করার। ব্রিটিশদের সহায়তায় নবাবের পুত্র হত্যা করেন ভেলু নাচিয়ারের স্বামীকে। ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন এই সাহসী নারী। তবে পালিয়ে এসেও তিনি হেরে যাননি। থামিয়ে রাখেননি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। নিজের ভেতরের শোককে রূপান্তরিত করেছিলেন তীব্র বিপ্লবস্পৃহায়।
দক্ষিণের একটি অঞ্চলে পালিয়ে এসে তিনি বসবাস শুরু করেন। তবে বারবার জীবনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। অবশেষে বিরুপাচীর কাছে দিনদি গুনে আট বছর বাস করেছিলেন তিনি। এই সময় নবাব হায়দার আলীর সঙ্গে তিনি জোটবদ্ধ হন।
লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শক্তির উৎখাত। ১৭৮০ সালে তিনি সফলভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অতটা সহজ ছিল না এক নারী সংগ্রামের ক্ষেত্রে। তিনি সমস্ত বিপ্লবী নারীদের নিয়ে একটি মহিলা সেনাদল গঠন করেছিলেন। এদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের অস্ত্রশস্ত্র সংরক্ষণের জায়গা খুঁজে বের করে তা নষ্ট করা।
একবার ব্রিটিশদের গোলা বারুদ সংরক্ষণের জায়গাটি খুঁজে বের করেন ভেলু নাচিয়ার। ভেলু নাচিয়ারের বিশ্বস্ত সঙ্গী কুইলি এক অদ্ভুত পরিকল্পনা করেছিলেন এই ব্রিটিশদের অস্ত্রশস্ত্র রক্ষার জায়গাটি নষ্ট করতে। কুইলি নিজেকে তেলের মধ্যে ডুবিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে ব্রিটিশদের অস্ত্র সংরক্ষণাগারে ঢুকে যান। তারপর মারা যায় ভেলু নাচিয়ারের মহিলা সেনা দলের অনেক কর্মী। ভেলু নাচিয়ারের নিজের পালিতা মেয়েও ওই অস্ত্রাগার বিস্ফোরণে মারা যান।
এরপর ভেলু নাচিয়ার নিজের কন্যাকে নিয়ে অন্য শহরে চলে যান। সেখানে গিয়েও দীর্ঘদিন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ভেলু নাচিয়ারের তৈরি মহিলা সেনাদল নষ্ট হওয়ার পর তিনি মূলত অন্তরালে থেকেই ব্রিটিশ উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। ইতিহাসে ভেলু নাচিয়ারের কথা সেভাবে পাওয়া যায় না। তবুও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।