ব্রিটিশ আমলের তৈরী জলাধার এবারে হাত তুলে দিয়েছে। ভার সইতে পারছেনা আর। ২০ ফুট গভীরতা বিশিষ্ট এই জলাধারটি টালা থেকে আসা জল ভরে আশপাশের প্রায় ২ লক্ষ মানুষের জলের চাহিদা পূরণ করে। কলকাতার কেন্দ্রের পুরো জলের আধার এই মহম্মদ আলী পার্কের জলাধারটি, তা বলাই যায়। কিছুকাল আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে নতুন ভাবে সংস্কার করে ওই জলাধারের ওপরে বাচ্চাদের খেলার উপযুক্ত করে এবং কিছু সৌন্দর্যায়ন করে পার্কের আদলে তৈরী করা হয়। তখন থেকেই এই পার্কটি কলকাতার অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। এখানকার দুর্গাপূজোও যথেষ্ট বিখ্যাত একটি পুজোর মধ্যে পড়ে। ৪০,০০০ স্কয়ার ফুট জায়গা নিয়ে এই পার্কটি অবস্থিত। তো এতকিছু ঘটে গিয়েছে এই জলাধারটিকে কেন্দ্র করে কিন্তু তৈরী হবার পর একবারের জন্যও সংস্কার করা হয়নি জলাধারটির। তার ওপর এ বছর পুজোর আগে সেই জলাধারের গায়ে কিছুটা পলেস্তারার প্রলেপ পড়েছিল। সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে, কেন এটি আর ভার সইতে পারলোনা। তবে স্বান্তনা এটুকুই, চাঙড় খসে পড়ার মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী ফুটপাথে কেউ ছিল না, তাই হতাহতের কোনো খবর নেই।
এবারে আসল কথা হল, জলাধারটি সংস্কার করতে হবে অবশ্যই যথাযথভাবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। সেই কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সোমবার এবং মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎ সোম ও গোকুল মন্ডল ওই জলাধারের অবস্থা খতিয়ে দেখতে যান। তাঁরা তখন নজর করেন, শুধু দেওয়াল খসে পড়াই নয়, জলাধারের উপরে ছাদেও বড়সড় ফাটল তৈরী হয়েছে। যার ফলে আগামী দিনে বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে যথেষ্ট তা তাঁরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন। বাইরেই এই অবস্থা, কিন্তু ভেতরে কি অবস্থায় রয়েছে ওই জলাধারটি তা নিচে না নামলে বোঝা যাচ্ছে না। সূত্র থেকে জানা গেছে, আজ দমকল আধিকারিকদের সঙ্গে জল সরবরাহ বিভাগের কর্তারা জলাধারের ভেতরে ঢুকবেন। সেখানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারদেরও থাকার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভার কর্তারা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আমলে তৈরী এই সেমি আন্ডারগ্রাউন্ড জলাধারের সংস্কার কিভাবে হবে, তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে। তবে সংস্কারের প্রথম ধাপ হিসেবে প্রথমেই এখানকার মাটি পরীক্ষা করা হবে। তারপর পুরো জলাধারটি কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে মুড়ে দেওয়া হবে নাকি কিছু দিয়ে আচ্ছাদন দিয়ে দেওয়া হবে, সেসব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ওই বিশেষজ্ঞরাই। এই প্রসঙ্গে বুধবার বিভাগীয় এক কর্তা বলেন, ওই জলাধার থেকে বড়বাজার এবং জোড়াসাঁকো সহ বহু জনবসতি এলাকায় জল সরবরাহ হয়। ব্রিটিশ আমলের এই জলাধারের খোলনলচে পাল্টাতে গেলে অন্তত দু বছর জল সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয় আবার সংস্কার না করলে জলাধারটির আয়ু ধীরে ধীরে কমে আসবে তা বলাই বাহুল্য। তাই যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে জল সরবরাহ, উদ্যান এবং ইঞ্জিনিয়ার বিভাগকে একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। আমরা কলকাতাবাসীর অবশ্যই চাই এর একটা স্থায়ী এবং পোক্ত সমাধান হোক যাতে ঐতিহ্যমন্ডিত পার্কটি নিজ মহিমায় বিরাজ করে পাশাপাশি জলাধারটি যেমন কলকাতার বৃহৎ অঞ্চলের মানুষের জলের চাহিদা মেটাচ্ছে, তেমনিভাবেই কাজ করতে পারে।