অ্যান্টার্কটিকায় মিলল মৃত নক্ষত্রের দেহাংশ

আজও মাউন্ট এভারেস্টের কোনায় কোনায় খোঁজ মেলে একসময় পর্বতারোহনে যাওয়া পর্বতারোহীর অবিকৃত দেহাংশ। আজও এভারেস্টে গেলে দেখা মেলে হারিয়ে যাওয়া পর্বতারোহী জর্জ ম্যালোরির ‘আইস বুট’। বরফের মধ্যে থাকার ফলে সেইসব দেহাবশেষ প্রায় অবিকৃতই থেকে যায়। কিন্তু সম্প্রতি বরফে ঘেরা অ্যান্টার্কটিকায় খোঁজ মিলেছে সুদূর সৌরজগতের কোলে বিরাজ করা এক নক্ষত্রের দেহাবশেষ-এর। সেটিও রয়েছে সম্পূর্ণ অবিকৃত। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সূর্যের থেকে বহুগুন ভারী একটি নক্ষত্রের মৃত্যু হয়েছে বছর কুড়ির মধ্যেই।

সম্প্রতি এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’ পত্রিকায়। এই গবেষণা থেকে জানা গেছে, অ্যান্টার্কটিকায় পুরু বরফের চাদরের নিচেই রয়েছে তেজস্ক্রিয় লোহার উপস্থিতি। এই লোহা এতটাই তেজস্ক্রিয় যে এর উপস্থিতি একমাত্র পাওয়া যেতে পারে পারমাণবিক অস্ত্রেই। জানা গেছে, ২০১৫ সালে অ্যান্টার্কটিকার কোহনেন স্টেশন থেকে প্রায় ১ হাজার ১০০ পাউন্ড ওজনের বরফ সংগ্রহ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এই বিশাল বরফখণ্ড পরে জার্মানিতে পাঠানো হয় গবেষণার উদ্দেশ্যে। গবেষণাগারে এই বরফখণ্ডটি ধুয়ে পরিস্রুত করে তাকে ফেলা হয় স্পেট্রোমিটারের নিচে। এর পরেই খোঁজ পাওয়া যায় বিশ্বের সবচেয়ে বিরল এবং পৃথিবীর বুকে সম্পূর্ণ অস্থায়ী একধরণের লোহার। এই লোহার পরমাণুর নিউক্লিয়াসে রয়েছে ২৬ টি প্রোটন এবং ৩৪ টি নিউট্রন। লোহার এই আইসোটোপটির নামকরণ করা হয়েছে লোহা-৬০। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অ্যান্টার্কটিকা থেকে যে বরফখণ্ডটি পাওয়া গেছে তার মধ্যে লোহার ৫ টি আইসোটোপের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন প্রতিটি আইসোটোপই অত্যন্ত তেজস্ক্রিয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অ্যান্টার্কটিকার বুকে এই তেজস্ক্রিয় লোহা এলো কথা থেকে? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সুপারনোভা থেকেই জন্ম হয়েছে এই তেজস্ক্রিয় লোহার। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মত, এইজাতীয় শক্তিশালী মেটালের জন্ম হয় তখনই যখন কোনো নক্ষত্রের মৃত্যু হয়। সুপারনোভা বা সৌর বিস্ফোরণের ফলে যখন কোনো নক্ষত্রের মৃত্যু হয় তার কোনো অংশ ছিটকে যেতে পারে তার শরীর থেকে। সেইসব ছিটকে যা অংশ থেকেই জন্ম হয় এইসব তেজস্ক্রিয় মেটালের।বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই জাতীয় মেটাল অত্যন্ত শক্তিশালী হলেও পৃথিবীর বুকে এই জাতীয় তেজস্ক্রিয় মেটালের আয়ুকাল খুবই কম হয়ে থাকে। খুব কম সময়ের মধ্যেই এই লোহা অন্য পদার্থে ভেঙে যায়। জানা যায়, এইজাতীয় তেজস্ক্রিয় মেটালের খোঁজ মেলে অতল সমুদ্রের খাতে যা লক্ষ লক্ষ বছর আগেই জমা হয়েছিল। এছাড়াও এই জাতীয় মেটাল রয়েছে চাঁদের পিঠে

 

বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, এর আগে কোনোদিন অ্যান্টার্কটিকায় এইজাতীয় মেটালের খোঁজ মেলেনি। 

জানা গেছে, পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র বা পারমাণবিক বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হওয়া কসমিক ডাস্ট থেকে জন্ম হতে পারে এইজাতীয় পারমাণবিক লোহার। তবে এক্ষেত্রে যে কোনো পারমাণবিক বিক্রিয়ার ফলে এই লোহার জন্ম হয়নি তা নিয়ে বেশ নিশ্চিত বিজ্ঞানীগণ। তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি অ্যান্টার্কটিকায় কোনো পারমাণবিক অস্ত্র আছড়ে পড়তে দেখা যায়নি। গবেষকরা এইব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছেন যে কোনো মহাজাগতিক ধুলোবালি থেকেও জন্ম হয়নি এই লোহার। সেই ক্ষেত্রে এই লোহার জন্ম যে কোনো নক্ষত্রের মৃত্যুর ফলেই হয়েছে তা নিশ্চিত

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...