রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু গাফিলতির অভিযোগ আসে, তা সে ডাক্তারের গাফিলতিই হোক, বা পরিস্থিতির শিকারে গাফিলতি। তার ফলে ঘটে চলেছে অমানবিক কাজকর্ম। চিকিৎসায় সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবও অনেক সময় রোগী মৃত্যু বা রোগীর অবস্থার জটিলতা বাড়ানোর কারণ হিসেবে দর্শিত হয়। এই ধরণের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একেবারে অগোচরে রাখা হয় রোগীর পরিজনদের। তার ফলস্বরূপ বিক্ষোভ দেখা দেয় বিভিন্ন জায়গায়। এবারে এই ব্যবস্থার অবসান ঘটতে চলেছে। মেডিকেল বোর্ডের ধাঁচে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা রোগীর পরিবারের সঙ্গে বসবেন চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করতে। এর ফলে রোগীকে বা রোগীর পরিজনদের চিকিৎসার গতিপ্রকৃতি জানতে বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ছুটে বেড়াতে হবেনা।
মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন বিভাগ প্রতিটি রোগীর চিকিৎসার জন্য মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বৈঠক করবে। যে রোগীর চিকিৎসার জন্য একাধিক বিভাগ জড়িত থাকে, সংশ্লিষ্ট সেই সব বিভাগের চিকিৎসকেরা বৈঠকে বসবেন, উল্টোদিকের চেয়ারে থাকবেন রোগীর পরিজনেরা এবং পরিস্থিতি বিশেষে কখনও রোগীও। ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট ক্যানসার ক্লিনিকে এই চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হয়েছে। প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ক্লিনিকে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বৈঠক করা হচ্ছে। মেডিক্যাল, অঙ্কোলজি, সার্জারি প্রয়োজনে রেডিয়েশন বিভাগের একজন করে চিকিৎসক এই বৈঠকে বসেন। বিভিন্ন বিভাগের আউটডোরে রোগীদের পরীক্ষা করার পর এখানে রেফার করা হয়। এপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে রোগীকে নির্দিষ্ট দিনে আলোচনার জন্য ডাকা হয়। সকলে একসঙ্গে চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি বিদেশেই আছে বলে বিভাগীয় প্রধানের দাবি। ডিক্টাফোনের মাধ্যমে এখানে রোগীকে পরামর্শ দেওয়া হয়। কানে হেডফোন লাগিয়ে মুখে মুখে রোগীকে যা পরামর্শ দেওয়া হয়, কম্পিউটারে সেটাই লিখিত আকারে উঠে আসে। অনলাইনে চিকিৎসার সেই তথ্য সার্ভারে চলে যায়। সেই নির্দিষ্ট নাম্বার দিয়ে ওই ডেটা বা তথ্য রাজ্যের যে কোনও হাসপাতাল থেকে পাওয়া যাবে। রোগী যদি অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা করতে যান, সেখানেও এই তথ্য পাওয়া যাবে। পরবর্তীকালে রোগীরা নিজেরাও যাতে তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য বের করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। আপাতত ব্রেস্ট ক্যান্সার বিভাগে এই ধরণের চিকিৎসা শুরু হলেও অঙ্কোলজি, স্ত্রী রোগ, ক্যান্সার, জিআই ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রেও খুব শীঘ্রই এই ব্যবস্থা শুরু হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এই পদ্ধতি এখানে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। এইভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে চিকিৎসা পদ্ধতি এগিয়ে গেলে কোনো সময়েই আর রোগীর পরিজনদের ক্ষোভ থাকবেনা।