প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর দিনটিকে জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ২০০১ সালে ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি-এর তরফে শক্তি সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন পাশ করা হয়েছিল। তার পর থেকেই সারা দেশ জুড়ে এই দিনটিকে উদযাপন করা হয়। শক্তির সংরক্ষণ নিয়ে নানান নীতি, উদ্যোগ গ্রহণ করে এই সংস্থাটি। ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি (বিইই) ভারত সরকারের অধীনস্ত একটি সংস্থা। সারা বিশ্বেও ঐ একই দিনে; অর্থাৎ ১৪ই ডিসেম্বর এনার্জি কনসার্ভেশান ডে পালিত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকেই এই দিনটি বিশ্ব জুড়ে উদযাপিত হচ্ছে।
সভ্যতা যত এগিয়েছে মানুষ নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তত এই পৃথিবীকে ব্যবহার করেছে। রসদ হিসেবে সে ব্যবহার করেছে পৃথিবীকেই, পরিবেশ আমাদের কাছে বিপুল সম্পদের এক অপরূপ সঞ্চয় ভান্ডার। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক শক্তির উপর ভর করেই আমাদের সভ্যতা ও বিলাসিতার সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে নগর সভ্যতা।
নিজেদের জন্য নিতে নিতে পরিবেশকে আমরাই কাঙাল করে দিয়েছি। আজ দিতে দিতে সেও ক্লান্তি। সবুজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে, উল্টো দিকে তাকেই আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি দূষণ, বিশ্বউষ্ণায়ন ! যা ডেকে নিয়ে এসেছে সভ্যতার বিনাশ।আমরা নিজেরাই নিজেদের বিনাশকে আহ্বান জানিয়েছি।
যথেচ্ছ ভাবে আমরা পরিবেশকে ব্যবহার করছি। পরিবেশের সমস্ত রকম উৎসকে নিজেদের কাজে লাগাচ্ছি। যার ফল ভয়ঙ্কর। এমন এক দিন আসতে চলেছে যেদিন পরিবেশের কাছে আমাদেরকে দেওয়ার মতো আর কিছুই থাকবে না। গান্ধীজি বলতেন, "নেচার ইস এনাফ ফর আওয়ার নিড, বাট ইট ইস নট এনাফ ফর আওয়ার গ্রীড"
সত্যিই তো তাই মানুষের লোভের জন্য যেকোন সঞ্চয়ই শেষ হয়ে যেতে পারে। কথায় বলে না বসে বসে খেলে রাজার গোলাও শেষ হয়। কখনও ভেবে দেখেছেন, যেদিন এই পৃথিবীর শেষ কয়লাটাও জ্বালানো হয়ে যাবে তারপর কী হবে? শেষ ফোটা পানীয় জলটাও যেদিন শেষ হয়ে যাবে সেদিন কী হবে? এমন দিন আসবে যেদিন শ্বাস নেওয়াও দুষ্কর হয়ে যাবে! কী করবেন সেদিন?
এত বন্যা, ভুমিকম্প, প্রাকৃতিক বিপর্যয় কেন হচ্ছে? সব উত্তর রয়েছে পরিবেশের আছে। তাকে বাঁচাতে পারলেই আমরা বাঁচব। তাই সংরক্ষণই একমাত্র পথ।
এখনও সময় আছে, তাই আর দেরি নয়! এখনও থেকেই শুরু হোক আগামীর চিন্তা। আসন্ন সময়ে পৃথিবী সভ্যতার সংকটে পড়বে। যত দিন যাবে আমরা একটু একটু করে শেষের সেই ভয়ংকর দিনের দিকে এগিয়ে যাবো। তাই তার আগেই করতে হবে সংশোধন। কেমন করে করবেন সংশোধন? কথায় বলে, প্রিভেনশন ইস বেটার দ্যান কিয়োর। তাই দরকার আগে থেকেই সতর্ক হওয়া, যার জন্য সচেতনা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। এমনই সচেতনা বাড়ানোর এক উদ্যোগের নাম হল কনসার্ভেশন ডে। বিশ্বউষ্ণায়ন ও দূষণ আমাদের পরিবেশের ধ্বংসের অন্যতম কারণ। এই দুই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়তে দরকার সচেতনা বাড়ানো।
আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশে, অশিক্ষা এবং অসচেতনতাই আমাদের প্রধান শত্রু। শক্তি সংরক্ষণের আগে মানুষকে শক্তির প্রয়োজনীয়তা বোঝানো আবশ্যক। তবেই শক্তি সংরক্ষণ সম্ভব। জ্বালানীর দহনের ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে, দূষণ বাড়ে, পৃথিবীর অপমাত্রা বাড়ে, গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন হয়। এই ধরুন গরম লাগলে আমরা এসি চালাই, তাতে বিদ্যুৎ খরচ হয়। বিদ্যুৎ কয়লা পুড়িয়েই উৎপন্ন হয়, ফলে শক্তি ক্ষয় হয়। শক্তি ক্ষয় করে আমরা সুখের জন্য এসি চালাচ্ছি, ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাচ্ছি, ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের নিষ্ক্রমন বেড়ে যাচ্ছে। যা ওজন স্তরের ক্ষতি করছে, ডেকে আনছে সেই বিশ্ব উষ্ণায়নকেই। ক্ষতি হচ্ছে পৃথিবীর। ফের গরম বাড়ছে, বন্যা- ঘুর্ণিঝড় বাড়ছে।
সব আন্তঃসম্পর্কযুক্ত! এই কারণেই সবার আগে দরকার শক্তির অপচয় বন্ধ করা এবং শক্তির সঞ্চয় করা। অচিরাচরিত শক্তি অর্থাৎ অপ্রচলিত শক্তি, যাদের অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে এই পৃথিবীতে, সেই সব শক্তিকেই আমাদের ব্যবহার করা উচিত। আজকের দিনে সারা পৃথিবীব্যাপী নানান সেমিনার, আলোচনা সভা ও নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংরক্ষণের বার্তাকেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এখনও সময় আছে, আমাদের হাতেও অনেক কিছু রয়েছে। আসুন ছোট ছোট পা ফেলি, সুন্দর পৃথিবীর সংকল্পে সবাই শক্তি সংরক্ষন করি।