গল্পের পাতা থেকে শুরু করে সিনেমার পর্দা, মৎস্যকন্যাদের আমরা অনেকবারই প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু চোখের সামনে আজ পর্যন্ত কেউই তাদের দেখা পায়নি। গল্পে তাদের যে রূপ বর্ণনা করা হয় তা থেকে জানা যায়, মৎস্যকন্যারা জলের নিচের অধিবাসী। তাদের শরীরের অর্ধেক মাছদের মতো এবং বাকি অর্ধেক মানুষের মতো। মানুষের মতো হাত থাকলেও তাদের থাকে মাছের মতো আঁশযুক্ত লেজ। লেজের সাহায্যে সাঁতার কেটেই তারা এক জায়গা থেকে পৌঁছায় অন্য জায়গায়। অনেকে স্বচক্ষে মৎস্যকন্যা দেখার কথা বললেও তার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আজও রয়েছে বিজ্ঞানীদের মনে।
কিন্তু, সম্প্রতি জানা গেছে, এক দ্বীপের দেশে খোঁজ মিলেছে বাস্তবের মৎস্যকন্যাদের। তবে তারা কবির চোখে দেখা সেই অর্ধেক মাছ ও অর্ধেক মানুষ নন। তারা প্রকৃতই মানুষ। তারা দিনের বেশিরভাগ সময়ই থাকেন সমুদ্রের জলের নিচে। সমুদ্রের নিচ থেকে ঝিনুক খুঁজে আনাই তাদের প্রধান কাজ। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে বসবাসকারীরাই হলেন বাস্তবের মৎস্যকন্যা। এই অঞ্চলে তারা হেনিয়ো নামে পরিচিত যার প্রকৃত অর্থ 'সাগরকন্যা'। এই হেনিয়োরা অগভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে সমুদ্রের নিচ থেকে তুলে আনে ঝিনুক এবং শঙ্খ। সমুদ্রের নিচ থেকে খুঁজে আনা এই ঝিনুক আর শঙ্খই তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ। এই অঞ্চলে হেনিয়োদের সাথে বসবাস করে পুরুষরাও। হেনিয়োদের আনা ঝিনুক ও শঙ্খ বাজারে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকে পুরুষদের উপর।
এই হেনিয়োরা প্রকৃতপক্ষে মহিলা ডুবুরি। শঙ্খ ও ঝিনুকের প্রজননের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেই হেনিয়োরা তা সংগ্রহ করতে সমুদ্রে ডুব দেয়। জানা গেছে, বর্তমানে ওই অঞ্চলে যতজন হেনিয়ো রয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ হলেন আল সু রা। তিনি শুধু এই গোষ্ঠীর মধ্যেই নন সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ ডুবুরি। তার বয়স বর্তমানে ৯৫ বছর| এছাড়া বর্তমানে যেসব হেনিয়োরা ওই অঞ্চলে বসবাস করেন তাদের বেশিরভাগ হেনিয়োর বয়সই ৬০ এর বেশি। জীবিকার কারণে দীর্ঘক্ষণ জলের নিচে থাকার অভ্যেস থাকে হেনিয়োদের। সমুদ্রের মধ্যে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত তারা নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকতে পারেন। গভীর জলের মধ্যে ২ মিনিটের থেকেও বেশি সময় থেকে যেতে পারেন হেনিয়োরা।
সবচেয়ে প্রবীণতম হেনিয়ো আল সু রা জানান, এই কাজে রয়েছে প্রচুর ঝুঁকির সম্ভাবনা। তাই অনেকক্ষেত্রে এই কাজের সাথে যুক্ত থাকতে চাননা অনেক হেনিয়ো। তিনি জানান, এর আগে ২০১৭ সালে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারান একজন হেনিয়ো। জানা গেছে, গত ৫০ বছরে অস্বাভাবিক হরে কমেছে হেনিয়োদের সংখ্যা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে যেখানে হেনিয়োদের সংখ্যা ছিল ২৬,০০০ সেখানে বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪,৫০০। দ্রুত গতিতে হেনিয়োদের সংখ্যা কমতে থাকায় পরবর্তীকালে তাদের অস্তিত্ব এই পৃথিবীর বুকে থাকবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।