১৬৯৮ সালের নভেম্বর মাস। ব্রিটিশরা তখন ভারতবর্ষে নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করার জন্য চেষ্টা করছে। বিভিন্ন জমিদারদের কাছ থেকে অনেক গ্রাম ইজারা নিচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার বাংলার এক ঐতিহাসিক জমিদার পরিবার। ১৬৯৮ সালের নভেম্বর মাসে সুতানুটি কলিকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটের সত্ত্ব সাবর্ণ চৌধুরী পরিবারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।
এই রায়চৌধুরী পরিবারের আদি বসবাস ছিল বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার আমাটিতে। তারপর এই বংশের উনিশতম পুরুষ পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় হুগলি জেলায় বসতি স্থাপন করেন। তারপর তাঁর বংশধরেরা কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করেন।
তিনি হালিশহরে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। সেখান থেকেই এই পরিবার পরে উত্তরপাড়া, বিরাটি ও বেহালার বড়িশায় ছড়িয়ে পড়ে।
ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীদের কাছে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের গৌরবময় ঐতিহ্য অনেক সময়ই গবেষণার বিষয় হয়েছে।
সেই গবেষণার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ ২০০৫ সালে বড়িশায় সাবর্ণ সংগ্রহশালা নামে একটি জাদুঘর স্থাপন করেন।
বর্তমানে এটি একটি গবেষণা ও প্রকাশনা সংস্থা হিসেবেও কাজ করছে।
এই জাদুঘর কলকাতার একমাত্র ব্যক্তিগত পারিবারিক সংগ্রহশালা।
জাদুঘরের ঠিকানা - সপ্তর্ষি ভবন, বড় বাড়ি, ৬৭/৩ ডায়মন্ড হারবার রোড, বড়িশা, কলকাতা-৮
বৃহস্পতিবার বাদে সপ্তাহে ছ'দিনই খোলা থাকে এই জাদুঘর।
জাদুঘর ঘুরে দেখার সময়সীমা সকালে দশটা থেকে বারোটা আর বিকেলে পাঁচটা থেকে সাতটা।
প্রবেশ মূল্য নেই। তবে ছবি তোলার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম। কোনো গবেষণার কাজে ছবি তুলতে হলে নির্দিষ্ট অধিকর্তার অনুমতি প্রয়োজন হয়।
মূলত গবেষণার কাজেই এই জাদুঘরে আসে শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা।
এই জাদুঘরের অবস্থান সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের এই বড়িশার বাস ভবনে।
সোঁদা গন্ধওলা মেঝে, লাল থাম-যুক্ত এই জাদুঘরে ইতিহাস কথা বলে ছবির মাধ্যমে।
জাদুঘরের এই ভবনে ঢুকলে ইতিহাসের রহস্যেরা ডানা মেলে। চোখের সামনে সময়-ভ্রমণ করায়। কল্পনার রাজ্যে পাড়ি দেওয়ায়।
১৬৯৮ সালের সেই নথি যেখানে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের তরফ থেকে ইংরেজদের তিনটি গ্রামের সত্ত্ব দেওয়া হয়েছিল তার প্রমাণ আজও রয়েছে এই জাদুঘরে।
কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় যেখানে জোব চার্ণককে কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়নি, তার কাগজপত্র রয়েছে এই জাদুঘরে।
আঠারো এবং উনিশ শতকের নানান গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এই জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। কবি রামপ্রসাদ সেনের স্বাক্ষর সমেত কাগজপত্র রয়েছে এখানে।
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারে মাটির একটি বিশেষ ভাত রান্না করার পাত্র ছিল, যেখানে একসঙ্গে ২৪০ কেজি চালের ভাত রান্না করা যেত। ঐতিহ্যবাহী সেই হাঁড়িও দেখা যেতে পারে এখানে।
সেই সময় ব্যবহৃত মুদ্রা, স্ট্যাম্প, ধাতুর তৈরি হুঁকো সাজানো রয়েছে এই জাদুঘরে।
১৭-১৮ শতকের কলকাতার সময়-ভ্রমণ করতে চাইলে আদর্শ স্থান হতে পারে সাবর্ণ চৌধুরীর এই সংগ্রহশালা।