আমাদের সমাজে কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা নিজেদের জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে চান সকলের সঙ্গে। এই রকমই এক সেনাকর্মী উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন আমাদেরই কলকাতা থেকে কিছু দূরে অবস্থিত হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাউরিয়া-তে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলস্টেশনের কিছুদূরেই অবস্থিত বাউরিয়া থেকে পাঁচলা যাওয়ার রাস্তায় উলুবেড়িয়া পুরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বুড়িখালীতে তৈরী হয়েছে সুদৃশ্য একটি পার্ক। তৈরী করলেন ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেনাকর্মী অসিত বন্দোপাধ্যায়। নিজের পেনশনের জমানো অর্থ দিয়ে ওই পার্কটি তৈরী করেছেন তিনি। পার্কটি তৈরী করা হয়েছে মূলত এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের জন্য। পার্কটির তিনি নাম রেখেছেন 'বৈঠকখানা'। আগামী ১৬ জুন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
বলাই বাহুল্য, পার্কটি নির্মিত হওয়ায় খুশি এলাকার বয়স্ক মানুষেরা। ওই এলাকায় তেমন কোনো পার্ক না থাকায় বাড়িতে বসেই সময় কাটতো এলাকার বয়স্ক মানুষদের। নতুন পার্ক তৈরী হওয়ায় তাই যেন খুশির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে সেখানে। সেখানকার মানুষেরা আরও খুশি হয়েছেন অসিতবাবুর এরকম নিঃস্বার্থ কাজ করার জন্য। তাঁদের মতে, যদি সকলেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরকমভাবে এগিয়ে আসে, তাহলে সমাজের চেহারাটাই পাল্টে যেতে পারে। প্রাক্তন সেনাকর্মী অসিত বন্দোপাধ্যায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে পার্কটি বানিয়েছেন। তাঁর মতে একটি বয়সের পর অনেকেই নিঃসঙ্গতায় ভুগতে থাকেন। ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ছোঁওয়া আমাদের সমানে গ্রাস করছে, বিভিন্ন রকম ভাইরাল দুনিয়া আমাদের যেন দিনের পর দিন নিজের মধ্যেই আবদ্ধ করে রাখছে। নিজেদের সুখ-দুঃখ- ইচ্ছে-অনিচ্ছে ছাড়া আমরা কারোর কথাই ভাবতে চাইনা। তাই বয়স্ক মানুষেরা হয়ে পড়েন ব্রাত্য। তাঁদের কথা আলাদা করে কেউ ভাবতে চায় না। তাই তাদের জন্য কিছু করার ভাবনা থেকেই এই পার্কটি গঠন করার কথা মাথায় আসে অসিত বাবুর। খোলা হাওয়ায় নিজেদের মত করে কিছুক্ষন সময় কাটাতে পারবেন বয়স্ক মানুষেরা। এলাকার সকল বয়স্ক মানুষেরা একসঙ্গে এক জায়গায় বসে গল্প করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে বয়স্ক লোকেদের জন্য প্রাক্তন সেনাকর্মীর বানানো পার্ক প্রবীণদের কাছে একটি অন্য বার্তা পৌঁছে দেবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে ওড়িশার সরকারি কর্মচারী গঙ্গাধর রাউত তাঁর রিটায়ারমেন্টের পর প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কেওনঝড় জেলার কানপুর গ্রামের ওপর বয়ে চলা সালান্দি নদীতে একটি ব্রিজ গড়ে দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন কৃষকদের কষ্ট তাঁকে পীড়া দিয়েছিল। পায়ে হেঁটে নদী পারাপার করে চাষ করতে যাওয়া যে কত কষ্টের, তা অনুভব করেছিলেন গঙ্গাধর বাবু।
এভাবেই কিছু অনুভূতিপ্রবণ মানুষের জন্য এখনও সমাজে ভালো কাজ হচ্ছে এবং মানুষের মুখে হাসি ফুটছে।