সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট কল্পবিজ্ঞানের চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর কথা মনে আছে? আশ্চর্য সব জিনিসের সম্ভার ছিল তাঁর ল্যাবরেটরি। প্রোফেসর শঙ্কু যদি বিজ্ঞানের এই নতুন আবিষ্কারের কথা জানতে পারতেন, নিঃসন্দেহে আনন্দে লাফিয়ে উঠতেন। 'ইউরেকা', 'ইউরেকা' বলে তাঁর প্রিয় বেড়াল নিউটনকে আদর করতেন। তাঁর পরিচারক প্রহ্লাদ হয়তো তাঁর 'বাবুকে' এমন দেখে খানিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেত। তা কি এই আবিষ্কার?
ইজরায়েলের তেল-আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক খুঁজে পেয়েছেন এক আশ্চর্য প্রাণী। তবে প্রাণী না বলে একে পরজীবী বলাই ভালো। এই পরজীবী বেঁচে থাকতে পারে অক্সিজেন ছাড়া।
এই প্রাণীটিকে দেখতে অনেকটা জেলিফিশের মত। বিজ্ঞানসম্মত নাম 'হেননিগুয়া সালমিনিকোলা'।
প্রাণীটি বহুকোষী। এর শরীরে নেই কোন মাইটোকনড্রিয়াল জিনোম। কী এই মাইটোকনড্রিয়াল জিনোম? পৃথিবীর প্রাণী জগতের বেঁচে থাকার প্রধান আধার-বস্তু হল মাইটোকনড্রিয়া। এটি আমাদের কোষের একটি বিশেষ অংশ, যা বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন সংগ্রহ করে, পরিবেশ থেকে। মাইটোকনড্রিয়ায় থাকে আমাদের বংশগতির ধারক ডিএনএ।
এই নতুন প্রাণীটি আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত এমন কোন প্রাণীর অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে ছিল না যেখানে মাইটোকনড্রিয়াল জিনোম নেই।
'হেননিগুয়া সালমিনিকোলা' নামের এই পরজীবী স্যামন মাছের শরীরে থাকে। এরা একেবারে ক্ষতিকারক নয়। স্যামন মাছের শরীর থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে এরা বেঁচে থাকে। অথচ মাছের কোন ক্ষতি করে না। স্যামন মাছ যতক্ষণ বেঁচে থাকে এই পরজীবীদের জীবনের অস্তিত্বও ঠিক ততক্ষনই।
এই পরজীবীর জন্ম এবং মাছের দেহে তাদের বিকাশ সম্বন্ধে এখনো ধন্দে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে চলছে গবেষণা।
২০১০ সালেও এরকম একরকম পরজীবীর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিলেন ইতালির কিছু বিজ্ঞানী। এদের শরীরেও মাইটোকনড্রিয়াল জিনোমের কোন অস্তিত্ব ছিলনা। এরা গভীর সমুদ্রে থাকত। অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থেকেছে। তবে এদের প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস হাইড্রোজেন সালফাইড। ওই পরজীবী সম্বন্ধে এর থেকে বেশী আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি।
'হেননিগুয়া সালমিনিকোলা' নামের এই পরজীবীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন হয় না হাইড্রোজেন সালফাইডের।
একটি ফ্লোরোসেন্ট মাইক্রোস্কোপ দিয়ে স্যামন মাছের দেহ পরীক্ষা করে দেখছিলেন ইজরায়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গবেষক। তখন তাঁরা এই পরজীবীর অস্তিত্ব লক্ষ্য করেন। তারপর শুরু করেন গবেষণা। তারা দেখেছিলেন স্যামন মাছের দেহ থেকে খাবার নিয়েই এই পরজীবী বেঁচে থাকে। প্রয়োজন হয় না পরিবেশের অক্সিজেনের।
এই পরজীবীর অস্তিত্ব বিজ্ঞানের জগতে এক নতুন দিশা।
কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীতে এমন অনেক আশ্চর্য গ্রহ, চমৎকার প্রাণীর অস্তিত্বের উল্লেখ রয়েছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আলোর খোঁজও ঠিক যেন কল্পলোকের কাহিনীর মত। বাস্তবের প্রোফেসর শঙ্কুরা সেখানে নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন।