স্কুল দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত

রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে ক্রমেই নিম্নমুখী, তা আমি-আপনি সকলেই জানি। একটি সিদ্ধান্ত যেন তা আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি, সালানপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলে গিয়েছিলেন। দুপুর ১১টা নাগাদ তিনি স্কুলে গিয়ে দেখেন, তিন জন শিক্ষক-শিক্ষিকার কেউ স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না।

      জেলার প্রাথমিক স্কুলের পঠন-পাঠনের হাল কিরকম দেখতেই তাঁর এরকম হঠাৎ যাওয়া, তা বলাই বাহুল্য। এর পর তিনি উপস্থিত পড়ুয়াদের বই থেকে রিডিং পড়তে বলেন। একজনও রিডিং পড়তে পারেনি। এমন কি সামান্য ক-খ-গ-ঘ বলতে বলা হলেও তারা সেটাও পারেনি। ওদিকে শিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত জেলা শাসক প্রশান্ত মন্ডল অন্য আর একটি ব্লকে গিয়েও একই ছবি দেখেন। জেলা প্রশাসনের কর্তারা বুঝতে পারেন, গোটা জেলার অধিকাংশ জায়গার হাল প্রায় একই রকম। তারপরই তাঁদের টনক নড়ে। গত ১৫ জুলাই শিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত জেলা শাসক জেলা ও সার্কল বিদ্যালয় পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক। সেই বৈঠকে জেলা শাসক সকলকে নির্দেশ দেন, প্রত্যেক ব্লক বা সার্কলে সরকারি আধিকারিকরা যেন প্রত্যেকে এক একটি করে স্কুলের দত্তক নেন। যেই স্কুলগুলো দত্তক নেওয়া হবে, সেগুলিকে মডেল স্কুলে পরিণত করা হবে। গোটা জেলা থেকে ১০-১২টি স্কুল দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কর্তারা দত্তক নেবেন। একটি ব্লকের জন্য এক জন বিডিও, জয়েন্ট বিডিও, সেখানকার সার্কল বিদ্যালয় পরিদর্শক, বিডিও দফতরের অন্যান্য আধিকারিকরাও এই লিস্টে রয়েছেন। এছাড়াও স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেমন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা দফতরের কর্মাধ্যক্ষদেরও এই প্রকল্পের অংশ করা হবে। তাঁদেরকেও বলা হবে, স্কুল দত্তক নেওয়ার কথা। সেই স্কুলগুলির দিকে তাঁরাও নজর রাখবেন।

      নিয়মিত স্কুলগুলিতে পড়াশুনো হচ্ছে কি না, সময়মতো স্কুল খুলছে কি না, মিড-ডে মিলের মান কিরকম, স্কুলে বিদ্যুৎ আছে কি না, জলের ব্যবস্থা কেমন, মিড-ডে মিলের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কি না, তা দেখতে হবে দত্তক নেওয়া কর্তাদেরই। পড়ুয়াদের খেলাধুলোর মানসিকতার ওপরেও জোর দেওয়া হবে। খেলাধুলোর সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের আর কী কী শেখানো হচ্ছে, সে সব বিষয়ে তাদের কতটা আগ্রহ, এই বিষয়গুলোও দেখা হবে। এইভাবে দত্তক নেওয়া স্কুলগুলিকে মডেল স্কুল হিসেবে রেখে অন্যান্য স্কুলগুলিও যাতে ওই পথেই যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে। ফলে পড়াশুনোর মান সার্বিকভাবে আরো উন্নত হবে।

      বলাই বাহুল্য, সারা রাজ্যে শিক্ষার যা হাল, তাতে করে এই রকম ব্যবস্থা যদি প্রতি জেলাতেই নেওয়া হয়, তাহলে প্রশাসনিক উদ্যোগে স্কুলগুলির উন্নতি হবে তা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায়। আশা করব সেই দিন একদিন আমাদের রাজ্যে আসবে, যেদিন সমাজের একেবারে গোড়া থেকেই সবাই শিক্ষার আলো পাবে।

    

      

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...