ছেলেটা ক্রিকেট খেলার একটা ম্যাচের মাঠে ছক্কা হাঁকাচ্ছে। তার শরীরি ভাষায় আবেগ স্পষ্ট। মাঠের সকলেই উত্তেজিত। ছেলেটার আনন্দের মুহূর্তের ভাগ নিতে ছুটে আসছে একজন সুন্দরী। স্বভাবিক নিয়মেই তাকে আটকাচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীরা। মেয়েটি কিন্তু মোটেই ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। নিয়মের ফাঁক গলে মন ভোলানো নাচের ভঙ্গিমায় সে ঢুকে পড়েছে মাঠে। প্রিয় খেলোয়াড়, প্রিয় মানুষ, ভালোবাসার আপনজনকে চকোলেট খাইয়ে দিতে দিতে সে ভাগ করছে আনন্দ। প্রিয়তমর সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে মিষ্টি মুহূর্ত। ছবিটা চেনা লাগছে তো? চকোলেটের বিজ্ঞাপন। নব্বই দশকের সময়টা মনে পড়িয়ে দেয়। এই বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত মিউজিক আজও স্মৃতির সুর। গুনগুন করে ওঠে নব্বই- পাগল মানুষ। নব্বই দশকের বিজ্ঞাপনের এমন অনেক স্মৃতি ওই সময়টার সুস্পষ্ট সাক্ষর রেখে গেছে। আজও নব্বই দশক এই সব বিজ্ঞাপনের স্মৃতির ভারে ক্লান্ত নয়।
নব্বই দশক এমন একটা সময় যখন স্মার্টফোনের আবির্ভাব কেউ কল্পনা করেনি, টেলিভিশন, দূরদর্শন ছিল মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। টেলিভিশনের জনপ্রিয় সিনেমা বা শো শুধু নয় তার মাঝে দেখানো বিজ্ঞাপনগুলোও সমানভাবে আকর্ষণ করত মানুষকে। স্কিপঅ্যাডবিহীন একটা সময়। বিজ্ঞাপনের উপস্থিতি বিরক্ত করত না তখন। আসলে বিজ্ঞাপন দেখাটাই ছিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেই বিজ্ঞাপনও হয়ে উঠেছিল মানুষের আপনজন।
জনপ্রিয় একটি তেলের ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের সেই বাচ্চাটাকে মনে আছে? মা পছন্দমত রান্না করে দেয়নি বলে সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। তারপর সেই ছেলে পছন্দের খাবার পেয়ে খুশি হয়। বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া ছেলেটির সারল্য মন কেড়েছিল নব্বই দশকের সব দর্শকের।
তারপর সাবানের সেই জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন যেখানে নব্বই দশকের সুন্দরী নায়িকা প্রীতি জিন্টার নাচ সকলকে ভালবাসতে শিখিয়েছিল সবুজ রঙের সাবানটাকে। জামা-কাপড় কাচার বিশেষ পাউডারের বিজ্ঞাপনের সুর আজও গুনগুন করে মানুষের মন। মাত্র চারফোঁটা লিকুইড ব্যবহার করে সাদা জামা-কাপড় যে এমন ঝকঝকে সাদা হয়ে উঠতে পারে তা বোধহয় নব্বই দশকের বিজ্ঞাপন নির্মাতারাই জানতেন। কিন্তু ভারতবাসীর কাছে এই বিজ্ঞাপনের আকর্ষণ ছিল একেবারে অন্যরকম। ব্যথা সারানোর মলমের বিজ্ঞাপনের সুরেও মনের ব্যথা সারত তখন। সে সময় মানুষের মন বিজ্ঞাপনকে নুইসেন্স হিসেবে ভাবতে শেখেনি। বিজ্ঞাপন যেন তার পছন্দের কোন একটা অনুষ্ঠান। এমনকী অনুষ্ঠানের মাঝে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখবে বলেই অনেকে দূরদর্শনের সামনে বসে পড়ত। শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট সিনেমা বা জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং সঞ্চালকরাই টেলিভিশন বিষয়টাকে জনপ্রিয় করেনি, নব্বই দশকের বিজ্ঞাপনের ভূমিকাও ছিল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
নব্বই দশক নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা সেই সময়কার বিজ্ঞাপনের নস্ট্যালজিয়াকে অস্বীকার করতে পারেন না। তাই বিজ্ঞাপনের কথা শুনলে বা বিজ্ঞাপন দেখলে কারোরই টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে যাওয়ার কথা মনে হয় না, বরং সেই দশকের স্মৃতিকথায় অন্যতম পালক যুগিয়েছিল এই বিজ্ঞাপন।