চার বন্ধু।কালু, মালু, বুলু এবং টুলু। কালু মানে কাকলি চক্রবর্তী, মালু মানে মালবিকা মজুমদার, বুলু মানে বুলবুলি সেন আর টুলু মানে টুলু বোস। পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খন্ড সীমান্তের একটা অঞ্চল। কাল্পনিক তবে প্রকৃতির শোভায় ঘেরা। সেই অঞ্চলের বোর্ডিং স্কুলে পড়তে এসেছিল চার বন্ধু। সেখানে একই ঘর ভাগাভাগি করে থাকে তারা।
চারজনের নামের শেষেই লু আছে বলে এদের নাম গন্ডালু। এরা রহস্য ভালোবাসে। যেখানেই বেড়াতে যায় বন্ধুর মত করে সঙ্গ দেয় রহস্য। এরা নিজেরাও বন্ধু। দলের পান্ডা কালু অর্থাৎ কাকলি চক্রবর্তী। কালু সবচেয়ে বুদ্ধিমতী। মালু অর্থাৎ মালবিকা মজুমদার আবার লেখিকা। কবিতা লেখে। বুলু অর্থাৎ বুলবুলি সেন খেলোয়াড়। তবে সাহসী নয় মোটেই। টুলু অর্থাৎ টুলু বোস এই রহস্য সিরিজের কথক। চারজনের নামের শেষেই লু অক্ষরটা রয়েছে বলে বন্ধুরাই এদের নাম দিয়েছিল গোয়েন্দা গন্ডালু।
একই ঘরের সঙ্গে সঙ্গে এরা ভাগ করে নেয় একই রকমের চিন্তাভাবনা। বেড়াতে ভালোবাসে এই চার বন্ধু। বেড়াতে গিয়েই যতই রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়া। বিপদ বুঝলে এরা নিজেদের মধ্যে কোড ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলে। শত্রুদের ঘায়েল করতে এই চার কিশোরীর জুড়ি মেলা ভার।
গোয়িতা গন্ডালুর লেখিকা নলিনী দাশের নিজের জীবনের প্রভাব পড়েছে এই গোয়েন্দা কাহিনীগুলিতে। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নাতনী পুণ্যলতার মেয়ে নলিনী দাশ। বিয়ের সূত্রে আবদ্ধ ছিলেন জীবনানন্দ দাশের ভাই অশোকানন্দের সঙ্গে। দীর্ঘকাল তিনি ‘ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন ফর উইমেনের‘ অধ্যক্ষা ছিলেন। মেধাবী ও বুদ্ধিমতী ছিলেন লেখিকা। ছোটদের জন্য লিখতে বরাবর ভালবাসতেন। ১৯৬৩ সাল থেকে ৩০ বছর ধরে তিনি সন্দেশের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। সেই সময়কার রক্ষণশীল সমাজে বসেও মেয়েরা যে অ্যাডভেঞ্চার বা রহস্যের বিষয়ে কারোর থেকে কম নয় সেই ধারণা তিনি তাঁর কলমের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করেছিলেন।
সন্দেশেই নিয়মিত প্রকাশিত হত গোয়েন্দা গন্ডালুর গল্পগুলি। প্রথম খন্ডে ছিল মোট ১৪টি কাহিনী। দ্বিতীয় খন্ডেও ১৪ টি কাহিনী রয়েছে। কয়েকটি গল্পের ইংরেজি অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে। মজা আর রহস্য মিলিয়েই সাজানো প্রতিটি গল্প। কিছু গল্পের অলংকরণ সত্যজিৎ রায়ের করা। লেখিকা নলিনী দাশ এই গোয়েন্দা গন্ডালু সিরিজের গল্পগুলোর মাধ্যমে তার নিজের ভেতরের ছকভাঙা মেয়েটির কথা বলতে চেয়েছেন বারবার। এমনকী ছোটবেলা থেকেই নারী-পুরুষের বিভেদ নিয়েও তিনি সোচ্চার হয়েছেন তাঁর গল্পের মাধ্যমে। তাই সাহসী ছকভাঙা, ডাকাবুকো গোয়েন্দার কথা বললে এই চার কিশোরীর নাম যথেষ্ট সুস্পষ্টভাবেই উঠে আসে।