১০০ দিনের কাজে প্রচুর অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পেটোয়া ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো, সিডিউলের রেট বাড়িয়ে নেওয়া, কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়া, ইচ্ছেমতো স্কিম তৈরী প্রভৃতি নানান রকমের অভিযোগ ওঠে এই প্রকল্প নিয়ে। এই বিষয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভও হয়েছে প্রচুর। গ্রামাঞ্চলেও ক্ষোভ হয়েছে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে।
এই সমস্ত দুর্নীতি রুখতে নতুন কিছু পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। 'সিকিওর' নামে একটি সফটওয়ারের মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে সমস্ত স্কিমের এস্টিমেট তৈরির কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই এস্টিমেট যদি অনলাইনে না তৈরী করা হয়, তাহলে কাজের অনুমোদন পাওয়া যাবেনা। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে যে এস্টিমেটটি তৈরী হবে, তা ধাপে ধাপে ব্লক ও জেলা স্তরে পাঠাতে হবে। সেই এস্টিমেটে যদি কোথাও ভুল থাকে, তাহলে তা আবার পঞ্চায়েত স্তরে পাঠাতে হবে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে স্কিমের এস্টিমেট পাশ হলেই সেই এস্টিমেটের অন্তর্ভুক্ত কাজ শুরু করা যাবে। এই নতুন পদ্ধতিতে কাজ গুছোনোর জন্য জেলায় জেলায় পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আধিকারিকদের দাবি, ১০০ দিনের কাজকে আরও স্বচ্ছ ও গতি দিতে নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।
আগে ১০০ দিনের কাজে গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়করা নতুন স্কিমের এস্টিমেট তৈরী করতেন। সেই এস্টিমেট খাতায় কলমে তৈরির পর তা ব্লক ও জেলায় পাঠানো হত। এরপর নির্দিষ্ট ভোটিং পাওয়ার অনুযায়ী ব্লক ও জেলাস্তরের আধিকারিকরা ওই এস্টিমেট অনুমোদন করতেন। কিন্তু পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি গত ৩জুন জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে জানান, ভোটের জন্য এপ্রিল ও মে মাসে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ ছিল। সেই কারণেই রাজ্য এখন অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, নতুন পদ্ধতিতে আপডেট করিয়ে নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিতে হবে। যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ করা যায়। কিন্তু সিকিওর সফটওয়্যারের মাধ্যমে এস্টিমেট তৈরী না হওয়া পর্যন্ত কোনও কাজ শুরু করা যাবেনা। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কনভারজেন্স স্কিম তৈরির ক্ষেত্রেও সিকিওর সফটওয়্যারকে এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকায় কোনও স্কিম হলে তার এস্টিমেট সিকিওর সফটওয়্যারের মাধ্যমেই করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। রাজ্যের অনুমোদন ছাড়া ওই সফটওয়্যারকে এড়িয়ে কোনও স্কিমে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা খরচ করা হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে। এমনকি, যে টাকা খরচ হয়ে গেছে সেই টাকাও উদ্ধার করতে হবে।
কোনও স্কিম নেওয়ার আগে দেখতে হবে তাতে অ্যাসেট তৈরী হচ্ছে কি না। অ্যাসেট তৈরী করা যাবেনা, এমন স্কিম নেওয়া যাবেনা। এছাড়া নদী সংস্কার, সলিড এন্ড লিকুইড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, কৃষির উৎপাদন বাড়াতে সেচখালের উন্নতি, বৃক্ষরোপন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরী সহ মোট ১৪টি বিষয়ে স্কিম তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যে চারপাতার চিঠি এসেছে, তার মধ্যে এই সিকিওর সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্কিমের এস্টিমেট তৈরির নির্দেশটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আধিকারিকদের দাবি। কারণ, এই ব্যবস্থা এবারেই প্রথম। এর ফলে প্রকল্পে স্বচ্ছতা বাড়বে। অনেক ক্ষেত্রে কাগজে কলমে স্কিমের বিভিন্ন রকম এস্টিমেট করা হলেও বাস্তবে কাজ না করেই পেমেন্ট দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তাতেও এই নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে রাশ টানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটাও সত্যি, এই নতুন ব্যবস্থায় পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়করা কত দ্রুত সড়গড় হচ্ছেন, তার ওপর কাজের গতি নির্ভর করবে। কিন্তু এটা বলাই যায়, নতুন এই স্মার্ট পদ্ধতি অবলম্বন করলে আখেরে রাজ্যের ১০০ দিনের প্রকল্পেরই লাভ হবে।