সাতহাজার মাইল উড়ান দেওয়া এই পাখিকে বিশেষ প্রোজেক্টের অন্তর্গত করা হয়েছিল

ওদের আকাশটা মুক্ত। ওদের আকাশে কোন সীমানা নেই। ইচ্ছেমত ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে পারে যে কোন আকাশে। ওদের কোন বাসা নেই। ওরা কোথাও ঘর বাঁধে না। ওদের কোথাও থেমে যেতে হয় না। ওরা প্রকৃত অর্থেই স্বাধীন। ওরা কারা?

ওরা পরিযায়ী পাখি। প্রকৃত অর্থে যাদের জীবনে পরিযান আসলে মুক্ত বাতাসের মত প্রাণখোলা আকাশের খোঁজ দেয়। এক বিশেষ ধরনের পরিযায়ী পাখির কথা জানা যাক।



বাদামি বর্ণের পালকে ঢাকা শরীর। ডানার রং ধূসর। ঘুঘু পাখি বা পায়রার মত দেখতে ওদের। ঠোঁট পায়রার চেয়ে বেশ খানিকটা লম্বা। এদের নাম বার টেলড গড-উইট। আমেরিকার আলাস্কায় এই বিশেষ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পাওয়া যায়।

প্রতিবছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ প্রজননের জন্য এই পাখি পাড়ি দেয় দক্ষিণ গোলার্ধে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডই থাকে তাদের গন্তব্য। এই পরিযায়ী পাখি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে গবেষণা করছিলেন। এদের নিয়ে এক আশ্চর্য তথ্য  সামনে এসেছে। বিশ্রাম, খাওয়া-দাওয়া এবং জলপান ছাড়াই গড়ে সাত হাজার মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে এই পাখি।

অর্থাৎ ন্যূনতম কোনরকম শক্তি ছাড়াও প্রায় প্রায় এগারো হাজার কিলোমিটার উড়ে যেতে পারে এই বিশেষ ধরনের পাখি। নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিং জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরিযায়ী পাখিদের চরিত্র এবং তাদের জীবনযাপন নিয়ে একটি বিশেষ ধরনের গবেষণা শুরু করেছিলেন অনেক বছর আগে। গ্লোবাল ফ্লাইওয়ে ছিল সেই প্রোজেক্ট-এর নাম। বেশ কিছু পরিযায়ী পাখির দেহে যুক্ত করা হয়েছিল একটি বিশেষ ধরনের মাইক্রোচিপ। এই মাইক্রোচিপের মাধ্যমে শুধু পাখিদের অবস্থানই নয় তাদের গতিবিধি, ডানার কম্পাঙ্ক সব তথ্যই গবেষকরা জানতে পারেন।

খুব সম্প্রতি সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে রীতিমত চমকে উঠেছেন গবেষকরা। একটানা প্রায় দুশ সাঁইত্রিশ ঘন্টা উড়তে পারে এই গডউইট পাখিরা। আমেরিকার উত্তর প্রান্ত থেকে অস্ট্রেলিয়ায় নিমেষে পৌঁছে যায় এই পাখিরা। এর আগে এক উড়ানে সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারতো এক বিশেষ ধরনের মঙ্গোলিয়ান কোকিল। যদিও সেই পাখিটি একবারই এতটা দূরত্ব অতিক্রম করতে পেরেছিল।

f50ae624-1bf4-47fe-96d2-0bef759a69c9

কিন্তু এই গডউইট পাখির সকল প্রজাতি এক বিশেষ ক্ষমতা-সম্পন্ন। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই বিশেষ ধরনের পাখির দেহের গঠন রীতিমতো অবাক করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এরা দেহের আকার বদলাতে পারে। পরিযানের আগে প্রচুর পরিমাণ পোকামাকড়, কিছু মৃতদেহ এবং অন্যান্য প্রাণীর দেহাবশেষ খায় এই পাখিরা। এর ফলে তাদের দেহের মধ্যে ফ্যাট সঞ্চিত থাকে। ওড়ার সময় এই ফ্যাট শক্তি প্রদান করে এই পাখিদের। পরিযানের আগে তাদের পেশীতেও বিশেষ বদল লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা।

তবে আমাদের সভ্যতা বলা ভালো মানব সভ্যতা বড় নিষ্ঠুর। এই বিশেষ পরিযায়ী পাখিরা নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে এখন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর দিয়ে ওড়ার সময় রাত্রি বেলায় কৃত্রিম আলোর দ্বারা আকৃষ্ট হয় এই পাখি। পরিযায়ী পাখিদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই পাখির নাম সবচেয়ে উপরে।

তবুও এরা উড়ে চলে। কোথাও বহমান জীবনের বার্তা দেয়। তার সঙ্গে আমাদের কাছে নিষ্ঠুর না হওয়ার আর্জি জানায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...