কলকাতা শহরের মধ্যে আর একটা ছোট্ট শহর রয়েছে। যার নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে। সে শুধু নিজের নয়, তিলোত্তমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। কলকাতার যে কয়টি জায়গা পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। কুমোরটুলি। তার অনেক গল্প আছে।
কান পাতলে সেখানকার গল্প কানে ভেসে আসবে। আর সেখানে গেলে দেখা যাবে ছোট ছোট গল্প যেন প্রতি মূহুর্তে ছোট ছোট চিত্রনাট্য লিখে চলেছে। মৃণাল সেন যেমন সিনেমার মধ্যে আরেকটি সিনেমার গল্প বুঝতেন, কুমোরটুলিও তাই। সে যদি একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি হয় তাহলে তার মধ্যে অজস্র চিত্রনাট্য রোজ অভিনীত হয়ে চলেছে। শুধু সেই গল্পগুলোকে খুঁজে নিতে হয়।
শুধু প্রতিমা তৈরি নয়। প্রতিমার হয়ে ওঠার অনেক ধাপ রয়েছে কুমোরটুলিতে। সেই ধাপ আস্তে আস্তে পেরিয়ে মাটির তাল, একটি অবয়বে পরিণত পায়। প্রতিমার দেহ অবয়বের জন্য যেমন কাঠামোর প্রয়োজন তেমনি মুখাবয়বের জন্য প্রয়োজন হয় ছাঁচের।
ছাঁচ হল কোন জিনিসের হুবহু আদলে তৈরি একটি কাঠামো। যা ঐ জিনিসটি প্রস্তুতির সময় ব্যবহার করা হয়। ছাঁচ হল ফাঁপা গর্ত। যেখানে উপাদানটি দিলে ঐ গর্তের আকার ধারণ করে। প্রতিমার মুখ বর্তমানে ছাঁচে ফেলে করা হচ্ছে। এতে কম সময়ে নিখুঁত মুখাবয়ব তৈরি করা সম্ভব।
ছাঁচ তৈরি হয় সম্পূর্ণ মাটি দিয়ে। দ্রব্য সামগ্রীর প্রকৃতি ও আকৃতি অনুসারে শিল্পীরা ছাঁচ তৈরি করেন। মৃৎপাত্র বা অন্যান্য শিল্পবস্তুর প্রকৃতি অনুসারে ছাঁচ তৈরি হলেও প্রত্যেকটি ছাঁচের নিচের অংশ হয় অর্ধচন্দ্রাকৃতি। নিচে পেতে দেওয়া হয় খড় বা কাপড়ের তৈরি গোলাকার খোলা। ফলে ছাঁচে দ্রব্য সামগ্রী নির্মাণের সময় অতি সহজেই ছাঁচটিকে ঘোরানো সম্ভব হয়।
মৃৎপাত্র বা অন্যান্য জিনিসের আকৃতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী ছোট-বড়ো নানান আকৃতির ছাঁচ ব্যবহার করা হয়। ছানা মাটি বা কাদা মাটির সাহায্যে সরু, লম্বা, দলা কাঠের বেলন বা খোলাইয়ের সাহায্যে রুটির মতো তৈরি করা হয়। এরপর ছাই বা বালি ছাঁচের ভিতরের অংশে ও রুটির বাইরের অংশে মাখিয়ে তা ছাঁচের মধ্যে চাপা দেওয়া হয়।
চাপা দেওয়া অবস্থায় এটি যখন ছাঁচের আকার ধারণ করে তখন জল মিশিয়ে সম্পূর্ণ ছাঁচটিকে ঘোরানো হয়। খোলার সাহায্যে এটিকে চেপে ধরা হয়। ফলে দ্রব্য সামগ্রীর ভেতরের অংশ সমান হলে ধীরে ধীরে আকার তৈরি হতে থাকে।
ছাঁচ থেকে মুখাবয়ব বের করে রোদে শুকিয়ে রং করা হয়। দূরবর্তী স্থানে প্রতিমা পাঠানো হলে সেক্ষেত্রে ছাঁচ থেকে বের করে রোদে শুকিয়ে পোড়ানো হয়। যাতে মূর্তি ভেঙে না যায়।
রথের পর থেকে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা জোর কদমে শুরু হয়ে যায়। এই সময় শিল্পীরা প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠার কাজে জোর কদমে লেগে পড়ে। এই সময় কুমোরটুলি গেলে দেখা যায় থরে থরে সাজানো রয়েছে সদ্য ছাঁচ থেকে বের করা প্রতিমার মুখ।