অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, জমিতে ফলছে ফার্নিচার

অবাক কান্ড! মাটির ভেতর থেকেই গজিয়ে উঠছে আস্ত চেয়ার-টেবিল-ল্যাম্পশেড। ইংল্যান্ডের ওয়র্ক্সওর্থ শহরে গেলে এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে। ২ একর জমি জুড়ে রয়েছে সবুজ গাছ গাছালি, আর তারই মধ্যে মাটি থেকে গজিয়ে উঠছে প্রাকৃতিক টেবিল-চেয়ার। শুনতে অবাস্তব লাগলেও ঘটনাটি বাস্তব। সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই তৈরী করা হচ্ছে এই ফার্নিচার। এর নেপথ্যে রয়েছেন গ্যাভিন মানরো, বর্তমানে তিনি ‘ফুল গ্রোন’ নামক প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরী একটি ফার্নিচার কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।

FotoJet (206)

কাছ থেকে দেখলে দেখা যাবে, গ্যাভিনের তৈরি বাগানে উল্টো করে রাখা সারিবদ্ধ চেয়ার দিব্যি বেড়ে উঠছে প্রাকৃতিকভাবে। উইলো গাছ খানিকটা বেড়ে উঠলেই চেয়ারে পিঠ রাখার অংশটির আকার নেয়। তার সুবিধে নিয়েই গাছগুলির সাথে কিছু আসবাব যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, সেগুলিকে সম্বল করে চেয়ারের আকৃতিতে বেড়ে উঠছে সবুজ পাতায় সমৃদ্ধ উইলো গাছ।

FotoJet (208)

একটা সময়ের পর গ্যাভিনের মনে হয়, এইভাবে কিছুটা শৈল্পিক ও কিছুটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মিশ্রণে গাছগুলিকে বড় করতে পারলে ফার্নিচার বানানোর জন্য আর আলাদা করে গাছ কাটার প্রয়োজন পড়বে না, গাছগুলি নিজেই সেই আকার ধারণ করে নেবে। এই ভাবনা থেকেই ২০১২ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে ফার্নিচার বানাতে শুরু করেন তিনি।

FotoJet (210)

এই বিশেষ পদ্ধতিকে অবলম্বন করে টেবিল-চেয়ারের পাশাপাশি ল্যাম্পশেড, মিরর ফ্রেমের মতো অন্যান্য সামগ্রীও অনায়াসে নির্মাণ করছেন গ্যাভিন। একটি উইলো গাছ সম্পূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে গেলে কমপক্ষে ৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেই ধৈর্য্যতেও বাজিমাত করেছেন তিনি, “আমরা গাছগুলিকে বেড়ে উঠতে দিই, বড় হওয়ার সাথে সাথেই অবলম্বনের সাহায্যে আকার দিতে শুরু করি, অনেকটা মাচা করার মতো। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী গাছগুলি বেড়ে উঠলেই সেগুলিকে কেটে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শুকোতে দেওয়া হয়,” বলছেন গ্যাভিন

FotoJet (211)

কিন্তু এই অভিনব চিন্তার সূত্রপাত কোথায়?

শৈশবে নির্দিষ্ট স্থান থেকে শিরদাঁড়া অবস্থানচ্যুত হলে, তা সোজা করার জন্য তাঁকে অস্ত্রোপচার করতে হয়। চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে শিরদাঁড়ায় একটি ফ্রেম বসানো হয়, যাকে অবলম্বন করে পুনরায় যথাস্থানে ফিরে আসবে শিরদাঁড়া। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তার মনে হয়েছিল মানুষের ক্ষেত্রে হলে গাছের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। অস্ত্রপচারের কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ির বাগানে বনসাই রোপণ করেন তার মা। সেটিকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দেওয়ার পর দেখা যায় অনেকটা সিংহাসনের আকার নিয়েছে সেই গাছ। মূলত জীবনের এই ঘটনা দুটি প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করে গ্যাভিনকে।

FotoJet (207)

আসবাব নির্মাণের জন্য উইলো গাছকে বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ এটা খুব দ্রুততার সাথে বেড়ে উঠতে পারে এবং অন্যান্য গাছের থেকে উইলো গাছ নিয়ে কাজ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। ২০১৫-১৬ নাগাদ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী ল্যাম্পশেড, আয়নার ফ্রেম সহ এই আসবাবগুলি বিক্রি করতে শুরু করলে বিক্রেতাদের তরফ থেকে ভালো প্রতিক্রিয়া এসেছে। কেউ কেউ আবার ওক্‌ ও চেরি গাছের আসবাবের জন্যেও বায়না করে গেছেন। এখন গ্যাভিনের লক্ষ্য প্রক্রিয়াটিকে আরও ৫০ বছর সচল রাখার, সেই দিকেই এগোচ্ছেন তিনি, আর আনন্দের সাথে বলছেন, “যেখানে গাছ জন্মাচ্ছে, সেখান থেকেই তৈরী হতে পারে আসবাব”।   

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...