নতুন প্রযুক্তির দৌলতে দেশের সীমান্তের মানুষ খুশির আলোয় উদ্ভাসিত হতে চলেছে। বহুদিন অপেক্ষার পর আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির জন্মদিনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করতে চলেছেন দেশের দীর্ঘতম দোতলা ব্রিজ বগিবিল ব্রিজের। দীর্ঘ ২১ বছরের অপেক্ষার অবসান। ১৯৯৭ সালে ব্রিজটির শিলান্যাস করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া। রেলের ছাড়পত্র পেতে লেগে যায় আরো ৫ বছর। সে বাধাও কেটে গেলে ২০০২ সালে আর এক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী ব্রিজটির কাজের সূচনা করেন, এবারে ২৫ ডিসে ২০১৮ সালে অপর আর একজন প্রধানমন্ত্রী তার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন এবং তারপরেই তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ৪.৯৪ কিমি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ৫,৯২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটি দেশের মুকুটে নতুন পালক। আসাম ও অরুণাচলপ্রদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হল এই ব্রিজটি সম্পন্ন হবার মধ্যে দিয়ে। অসমের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দিয়ে ডিব্রুগড় জেলাকে অরুণাচলপ্রদেশের ধোমাজি জেলার সঙ্গে রেল ও সড়কপথে জুড়বে এই ব্রিজ। রেলপথে এতদিন এই দুই জায়গার দূরত্ব ছিল ৫০০ কিমি, যা এখন কমে দাঁড়াল ১০০ কিমিতে। ফলে যাতায়াতের সময় বাঁচবে প্রায় ১০ ঘন্টা। এই সেতুর দৌলতে অসমের সঙ্গে অরুণাচলপ্রদেশের যোগাযোগও অনেক বেড়ে গেল। অনেক সুবিধা হল দেশের সেনাবাহিনীরও। সীমান্ত খুব কাছে থাকায় এই ব্রিজটিকে ব্যবহার করতে পারবে সেনাবাহিনী। সীমান্তে থাকা সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই ব্রিজ। উত্তরপূর্ব ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে পরিচিত ডিব্রুগড়ের সঙ্গে খুব অল্প সময়ে অরুণাচলপ্রদেশের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে এই ব্রিজটি। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবায় খুব সহজেই ডিব্রুগড়ের সাহায্য নিতে পারবে অরুণাচলপ্রদেশ।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও স্থাপত্যের সংমিশ্রনে গড়ে উঠেছে এই বগিবিল ব্রিজ। দোতলা এই ব্রিজের নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন আর ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি। ট্রেন চলাচলের জন্য থাকছে ডাবল লাইন এবং গাড়ি চলাচলের জন্য থাকছে তিনটি লেন। ব্রিজটি তৈরির গোটা কাজটিই করেছে নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে। ব্রিজটির কাঠামো তৈরিতে কোনো নাট-বল্টু ব্যবহৃত হয়না তার ফলে মাঝারি মানের ভূমিকম্পেও এটি অটুট থাকবে। ১২০ জন ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানে ইলেক্ট্রিক্যাল আর্ক্ ওয়েল্ডিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে কাঠামো তৈরিতে। নির্মাতাদের দাবি, গোটা ব্রিজটাই ওয়েল্ডিং-এর ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। যা দেশের মধ্যে এই প্রথম। এইভাবেই যথেষ্ট উৎসাহ এবং উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন হতে চলেছে এই ব্রিজটির। উত্তরপূর্ব ভারতের পক্ষে ব্রিজটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।