খোলা চত্বর। হলুদ বনভূমি। তারই মধ্যে রাজকীয় ভঙ্গীমায় হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে পশুরাজ। কখনও একা আবার কখনও সঙ্গীসমেত। দূর থেকে হেঁটে আসছে মাথায় ক্যাপ পরা এক সাদা সাহেব। টানটান চেহারায় দেখলেই হাইজাম্প দেয় মনের এনার্জি। জড়তাহীন ভঙ্গীতে তিনি এগিয়ে আসছেন পশুরাজের দিকে। দর্শকদের মনের ভাবটা কী হয়, কী হয়!
সাহেবকে দেখেই গায়ের ঝাঁপিয়ে পড়ল পশুরাজ! ভাবছেন রক্তারক্তি কান্ড!
ওমা কোথায় কী! মাটিতে ফেলে দেদার আদুরে হুটোপাটি আর জাপ্টাজাপ্টি। সাহেবের গায়ে লেপ্টে থাকে কয়েকখানা সিংহ! তখন তাদের দেখে কে বলবে ইনি পশুরাজ। তার গর্জনে গোটা বনে থরহরি কম্প! এ যেন একেবারে বাড়ির পোষা পুচকি কুতুয়াটা। দর্শকরা হাঁ হয়ে যায় সাহেবকে দেখে।
সাহেবের নাম কেভিন রিচার্ডসন। ইউটিউব থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এক মুখ। নেটদুনিয়ার মানুষ তাঁকে চেনে ‘ দ্য লায়ন উইশপারার’ নামে। হায়না, চিতার সঙ্গেও তাঁকে একইভাবে দেখা যায়। কিন্তু কেভিন বিখ্যাত তাঁর ‘সিংহ শিশু’দের জন্য।
কেভিন রিচার্ডসনের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেন্সবার্গে। পশুপাখির ওপর খুব ছোটবেলা থেকে টান। সেই গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, খুব ছোটবেলায় একবার তাঁর বাবা একটা পাখির ছানা এনে দিয়েছিলেন। সে উড়তে শেখেনি তখনও। গায়ে পালকও তৈরি হয়নি। নিজে খেতে শেখেনি। সেই ছানাটি খুব প্রিয় হয়ে ওঠে কেভিনের। দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সেই ভালোবাসাটা থেকেই যায় আজীবন। বিএসসিতে অ্যানাটমি আর ফিজিওলজি নিয়ে মেজর করার পর পশুপাখি নিয়েই শুরু করের কেরিয়ার।
“আমি মনে করি প্সহুপাখি মুক্তভাবে বেঁচে থাকুক, কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা পাখি ছাড়া আর কারুর ক্ষেত্রেই তেমন সহজ নয়”।
১৯৯৮ সালে জোহেন্সবার্গ লায়ন পার্কে কেভিন রিচার্ডসনের সঙ্গে ৭ মাসের দুই সিংহ শাবকের দেখা হয়। তার নাম ছিল টাউ আর নেপোনলিয়ন। কী যে ভাল লাগে যায় তাদের, কেভিন প্রত্যেকদিন তাদের দেখতে যেতে থাকেন। এভাবে লায়ন পার্কে পার্ট টাইম একটা চাকরিও পেয়ে যান। হাতে যেন চাঁদ পান কেভিন। এ সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি।
তখনও ইন্টারনেট যুগ দুরস্থ। হাতের কাছে চাইলেই ইচ্ছেমতো তথ্য জানার সুযোগ কম। সিংহের আচরণ, প্রকৃতি নিয়ে যে খুঁটিয়ে জানবেন বাইরে থেকে তথ্য পেয়ে কোনও সুযোগই নেই। উপায় একটাই পার্কের সিংহদের ভালো করে খুঁটিয়ে দেখা। সেভাবেই সিংহদের ক্রমশ কাছে আস্তে শুরু করেন। তাদের বিশ্বাসী হয়ে ওঠা খুব সহজ ছিল না কিন্তু কীভাবে যেন সেই পর্বও পার করে ফেলেন তিনি।
ভয় কি তাঁর করেনি কোনওদিন? আশংকা কি আসেনি আহত হওয়ার?
বহুবার এসেছে। শুরুর দিকে ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ অনেক বেশি ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সেই ভয়কে অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। যে কোনও সম্পর্কের মতো অনেকটা সময় তিনি দিয়েছেন সিংহদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্রমাগত লালন করেছেন তাদের। হাল ছাড়েননি কোনও পরিস্থিতিতেই।