পৃথিবীর আয়তনের সিংহভাগ দখল করে রয়েছে সে। বিরাট জলাধার।সমুদ্র।অ্যাং লি-র অন্যতম বিখ্যাত ছবি,লাইফ অফ্ পাই। সদ্য কৈশোর পেরনো পাই এর পরিবার সহ একটা আস্ত জাহাজ গিলে খেয়েছে সমুদ্র।ভাগ্যের জোরে বেঁচে বেরিয়েছে সে। একটা লাইফ বোটে। সঙ্গে রিচার্ড পার্কার। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তার উপস্থিতি পাই –কে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী করে তুলেছিল।দিনের আলো রাতের কোলে ঢলে পড়লেই সেই সমুদ্র ধরা দেয় অন্য মহিমায়। তার আত্মজরা নিজ বৈশিষ্ট্যে সাজিয়ে তোলে তাদের চারণভূমিকে।
সমুদ্রের ২০০ মিটার গভীরতার পর থেকেই সূর্যালোক আর পৌঁছয় না। এই অঞ্চলকে বলা হয় মিডনাইট জোন।তবে সূর্যালোক পৌঁছয় না বলে এটা ভাবার অবকাশ নেবেননা যে সেখানে আলোর কোনও বালাই নেই। আলো সে পেয়েই যায়।সেখানেই বসবাস তাদের। নিজের শরীর থেকে তারা আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়। কী বলবেন তাদের? এলিয়েন! না, না তারা এই জগতেরই। ছেলেবেলা থেকেই চেনেন তাদের সকলে।বায়োলুমিনেসেন্স।জীব দ্যুতি।আলো তৈরির কারিগর।
প্রশ্ন হলো কীভাবে তৈরি হয় এই আলো? সঙ্গীকে আকৃষ্ট করা আর শত্রু কে প্রতিহত করাই মূল উদ্যেশ্য।শিকার ধরতেই নিজেদের সাজিয়ে তোলা।অন্যান্য আরও কারণ গবেষকরা ধরতে পারেননি। ফ্যাংটুথ- আকারে ও অনুপাতে সর্ববৃহৎ দাঁতের অধিকারী। সবচেয়ে দুর্ধর্ষ শিকারী।কম যায় না শিকার হওয়া প্রাণীরাও। ফ্যাংটুথ দের জলের ঘোল খাইয়ে ছাড়ে তারাও। কিছু প্রাণী সৌভাগ্যবান হয়না। আলো তৈরি হয়না তাদের শরীরে।অণুজীব ধারণ করে সেই আশ মেটায় তারা। ফ্ল্যাশলাইট ফিশ। চোখের নীচে বিশেষ অঙ্গে আলো উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এরা।
ইনফ্রায়েড ক্যামেরার দৌলতে একমাত্র এদের দেখতে পাওয়া যায়। শিকারী প্রাণীরা এদের দেখেই বিভ্রান্তিতে পড়ে। এদের আলোগুলো মূলত খাওয়ার খুঁজতে সহায়তা করে।আলো সাহায্য করে সঙ্গীর সঙ্গে ভাবের দেওয়া নেওয়া করতে। কিছু হাঙর আছে যারা অন্ধকারে নিজের শরীরে সবুজ আভা আনতে পারে৷নিউ ইয়র্কের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড গ্রুবার খুঁজে পেয়েছিলেন সেই অণু যা হাঙ্গরটিকে আলোকিত করে৷
ছোট টেরোফিলিয়াম স্কেলার। সাধারণত ‘অ্যাঞ্জেলফিশ’ নামে পরিচিত৷ জন্মগতভাবে এই মাছটি উজ্জ্বল আভা ছড়াতে পারে৷বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়োলুমিনেসেন্স ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নিজের মধ্যে আলো উৎপাদন করে। ১৮০টিরও বেশি প্রজাতির বায়োলুমিনসেন্ট মাছ রয়েছে।গভীর সমুদ্রের নিজেকে আলোকিত করার ক্ষমতা রাখে এমন অনেক মাছ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ‘হ্যাচেট’৷ গভীর সমুদ্রের কিছু প্রাণী নিজেকে আরও বেশি আলোকিত করতে আলো উৎপাদন করে থাকে।
মিল্কি সিজ ইফেক্ট বা মারিল এমন একটি ইফেক্ট যেখানে, রাতে সামুদ্রিক ডাইনোফ্লাজেলেটরা গ্লো করলে তা স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে। এরকম একটা ছবিও এসেছে প্রকাশ্যে।ছেলেবেলায় বোতলে জোনাকি পুড়ে রাতে অন্ধকার ঘরে তার আলো দেখে স্বপ্ন সাগরে ডুব দিয়েছে কতই না শিশু। সমুদ্রের এই প্রাণীদের দেখার সৌভাগ্যও যদি সেইভাবে আসতো!পাই এর মত বলতে ইচ্ছে হয়, পৃথিবীর ভয়ঙ্করতাতেও রয়েছে অরূপ সুন্দরের ছটা।