সত্তর আশির দশকের হিন্দি ছবি অথবা নব্বই এর দশকের শহরের উত্তুরে অলি গলি। দুপুর হলেই দেখা যেত মাদারী খেল। বাদর কাঁধে করে চলত বিক্রম বেতাল অধ্যায়। কিন্তু আজ আর এখানে ছবিটা একটু আলাদা। এখানেও চলে মাদারী খেল। একদিকে নিঃসন্দেহে আছে মানুষ। আর অপরপক্ষ হলো হায়েনা। আর আছে বেবুন এবং স্থানীয় বিষধর সাপ। তারমধ্যে সে খেলার এমন ধরণ যে দেখলে শিহরণ জাগে।
কেউ বলে স্ট্রিট গ্যাং, কেউ বলে দুর্ধর্ষ বন্য। মেলামেশা এবং যাপন যে তাদের সঙ্গেই; অর্থাৎ সেই বনের সুন্দর বন্যদের সঙ্গে। আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমের দেশ নাইজেরিয়ার লাগস শহরে এদের জন্ম কম্ম। পোষ্য প্রাণীদের সঙ্গে নানান সাহসিক ও ভীতিদায়ক খেলা দেখিয়েই পেট চলে। কিন্তু বেগ পেতে হয় সেই পোষ্য প্রাণীদের তালিকা দেখে! হায়েনা! হ্যাঁ, এরাই সেই নাইজেরীয় হায়েনা মানব। শুধুই হায়েনা! না! সেই তালিকায় আছে বিষধর সাপ এবং বেবুন।
গোটা মহাদেশের মধ্যে একটু বেশি সংখ্যক লোকের বাস এখানেই। প্রায় উনিশ কোটি লোকসংখ্যা। অথচ সিংহভাগ দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান করছে। ফি দিনে স্থানীয় বাজারে একটু ভিড় হলেই দেখা মেলে এদের। নানান কসরত দেখিয়ে চলছে সামান্য রোজগার। শুধু খেলা দেখিয়ে নয়, তার পাশাপাশি বেচাকেনা চলে কিছু আয়ুর্বেদিক ঔষধির। কসরত দেখাচ্ছেন বাচ্চা থেকে শুরু করে মাঝ বয়সীরাও। স্থানীয় পরিবেশ মানুষ ও বন্য প্রাণী, উভয়ের পক্ষেই অস্বাস্থ্যকর। তবুও এরই মধ্যে চলছে দিন গুজরান। দৈনিক প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগানও নেই পর্যাপ্ত। স্থানীয়রা এই অঞ্চলের নাম রেখেছেন ল্যান্ড অফ্ নো টুমরো; অর্থাৎ আগামী এখানে অনিশ্চিত।
হায়েনা মানবরা বিশ্বাস করেন এই বন্য প্রাণীদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রের ভিত্তি, আধ্যাত্মিক। তাই নার্নিয়ার সেই ফুন এর মত এরা একে অপরের শরীরে সংযুক্ত। অর্ধেক মানব আর অর্ধেক সিকি ভাগ হলেও হায়েনা। এই আধ্যাত্মিক যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যম হল আবার ডুডু মন্ত্র। প্রাচীন এই মন্ত্র চর্চার মাধ্যমেই তারা নাকি বশে আনে বন্য হায়েনাদের। অনেকে এর কারণ হিসাবে তাদের আত্ম প্রাকৃত স্বভাব এর কথা বলে থাকেন।
ইদানিং এমন কিছু ঘটনাও সামনে এসেছে যেখানে স্থানীয় চোরাচালান আর মাদক পাচারে, সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন এরা। যদিও যাচাই হয়নি এই অভিযোগের সত্যতা। কারণ, বর্তমান এক্ষেত্রেও। কেউ কেউ তির্যক মন্তব্যে বলে থাকেন, এদের বশে হায়েনা থাকার কারণেই কেউ আর সাহস পায়না এদের রাস্তা আটকানোর। হায়েনার পাশাপাশি এদের সার্কাসের অন্যতম জোকার বলা চলে বেবুনদের। বেবুনরা হাবেভাবে মানুষের মতই। বিষধর সাপ নিয়ে খেলা করার জন্য প্রশিক্ষিত এরা। সাধারণত এসব সাপ বেবুনদের পক্ষে বিপজ্জনক হলেও এখানে খেলাটা ঘুরে যায়। ওরাই শো স্টপার।
সব গল্পেরই যেমন একটা মোড় থাকে, এখানেও তেমনটা আছে। এতক্ষণ দেখা গেলো মানুষের অস্তিত্বের সংগ্রাম। আর যে কোনও সংগ্রাম অন্য এক পক্ষের বশ্যতা শিকার করা ছাড়া সম্ভব হয় না। আর এখানে শিকার এর লক্ষ্যে রয়েছে বন্যপ্রাণ। কাজেই অন্য আরেক পক্ষ পথ আটকাবেইই।
দেশের আইনে স্বীকৃত নিছক এই খেলা যা আবার হায়েনা মানবদের কাছে এক ঐতিহ্য বিশেষ। কিন্তু শিকার যখন বর্বর, তাদের বশে আনার প্রক্রিয়াতেও আসবে বর্বরতা। তার সঙ্গে জুটেছে পেটের জ্বালা মেটানোর তাগিদ। তাই বন্যপ্রাণ প্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন সেই পাশবিক বর্বরতার প্রকৃত তাৎপর্য নিয়ে। মানুষের তাগিদ মেটাবার মাধ্যম অন্য আরেক প্রাণের হত্যা বা অত্যাচার হতে পারেনা। এক অর্থে যথার্থ। মানুষ তখনই মানুষ যখন সে স্বয়ম্ভু। নিজের শ্রম ঝরিয়ে খাওয়ার যোগাড় করাই একমাত্র ধর্ম হওয়া উচিত। হয় তো।