কালী কথা: সপরিবারে পূজিতা হন খুঁড়িগাছির ডাকাতে কালী

হুগলির খুঁড়িগাছিতে রয়েছে ডাকাতে কালীর মন্দির। গোটা হুগলিজুড়ে এমনকি গোটা বঙ্গেই রয়েছে অজস্র ডাকাত কালীর মন্দির। কিন্তু খুঁড়িগাছিতে দেবী বিরাজ করেন সপরিবারে, এটাই বিশেষত্ব। কালী বিগ্রহের নিরিখে খুঁড়িগাছির ডাকাত কালী ব্যতিক্রমী।

হুগলি দিলাকাশের পাশে খুঁড়িগাছিতে শ্মশানসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ডাকাতকালীর প্রাচীন মন্দির। জানা যায়, এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রানী ভবশঙ্করী। রানী ভবশঙ্করীকে সম্রাট আকবর রায়বাঘিনী উপাধিতে ভূষিত করে ভুরশূটের স্বাধীন সামন্ত অধিপতি হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

সেকালের খুঁড়িগাছি ছিল জঙ্গলে ঘেরা। মানুষের তেমন যাতায়াত ছিল না। ডাকাত দল ঘাঁটি গেড়েছিল খুঁড়িগাছিতে। ডাকাত দলের সর্দার ছিলেন কোনও এক ব্রাহ্মণ। তাঁর পদবি ছিল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি গাঙ্গুলি ডাকাত নামে পরিচিত হন।

জনশ্রুতি রয়েছে, গাঙ্গুলি ডাকাতের দলবল একদা বর্ধমানের মহারাজার বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিল। আট-দশ বছর বয়সী এক মেয়ের কাছে বাধা পেয়ে, তাদের আর ডাকাতি করা হয় না। দলের অন্য সদস্যরা মেয়েটিকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। সর্দার মারতে দেননি। ডাকাতি করতে না পারলেও সর্দার একটা কালী মূর্তি চুরি করে সঙ্গে নিয়ে আসে। বিগ্রহ নদীপথে আনা হয়। সেই মূর্তি খুঁড়িগাছির জঙ্গলে প্রতিষ্ঠিত করেন। মূর্তি যেখানে প্রথম স্থাপিত হয়েছিল, দিলাকাশের সে'জায়গাটি গির্জাতলা নামে পরিচিত। জায়গাটি নাকি ঢিবির মতো ছিল। তার উপরেই মূর্তি স্থাপিত হয়। চুরি হওয়া মূর্তির খোঁজ শুরু করেন বর্ধমানের রাজা। একদিন স্বপ্নাদেশ পান রাজা। স্বপ্নে দেবী জানান, তিনি খুড়িগাছিতে রয়েছেন। আর ফিরতে চান না। পরবর্তীতে মন্দির নির্মাণ করে দেন ভবশঙ্করী।

দেবী করাল বদনা, তিনি বামাকালী। দেবীর পদতলে থাকেন মহাদেব। শিবের ওপর দেবী দাঁড়িয়ে আছেন। দেবী চতুর্ভুজা, কৃষ্ণবর্ণা। দেবীর সঙ্গে থাকে পরিবারও। চার সন্তান কার্তিক, গণেশ এবং লক্ষ্মী ও সরস্বতী। ডাকিনী, যোগিনী থাকেন। সঙ্গে জয়া এবং বিজয়াও থাকেন। দেবী যেন কালীরূপে সপরিবার দুর্গা। দেবীর প্রাচীন বিগ্রহ ও মন্দির নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর নতুন মন্দির গড়া হয়েছে। বিগ্রহের কলেবর করা হয়েছে।

মন্দিরের ফলকে লেখা রয়েছে,
'শ্রী কালী ত্রিসপ্তাষ্টেন্দু শাকেহত্র মীনে
ভানৌ মিতে কুজে।
খুঁড়িগাছীতি পল্লীস্থৈশ্চিন্ময়ী
স্থাপিতা মঠে।।'

ফলকের নীচে লেখা রয়েছে, 'বীরাঙ্গনা রানী রায়বাঘিনী প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস প্রসিদ্ধ শ্রী শ্রী ঈশ্বর ডাকাতে কালী মন্দির খুঁড়িগাছি, হুগলি'। জানা যায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাণী রায়বাঘিনী। কিন্তু নির্দিষ্ট দিন, তারিখ জানা যায় না। রাণী রায়বাঘিনী প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি সংস্কারের পর নতুন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৭৩ শকাব্দ তথা ১৯৫১ সালে। বর্তমান মন্দিরটি বাংলার নবরত্ন স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত।

কালী মন্দিরের খানিক দূরেই রয়েছে, লীলাবতীর থান, শিবমন্দির, মহাপ্রভু মন্দির। এখন যেখানে কালী মন্দির, সেই এলাকায় এক সময় শ্মশান ছিল। দেবী শ্মশান কালী হিসাবেই পরিচিতা ছিলেন। দেবীকে চামুণ্ডা রূপে পুজো করা হত। এখনও ভক্তরা মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। নিত্য পুজোর পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজোও হয়। চৈত্র মাসের অমাবস্যায় মন্দিরের বাৎসরিক পুজো হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...