তাঁর নাচ শেখা অনেকটা যেন খেলার ছলেই

প্রথম বিদেশ যাওয়া ১১ বছর বয়সে। সাত সাগর পেরিয়ে একেবারে প্যারিসে।

বাবা অক্ষয় কুমার নন্দী নামকরা গহনা ব্যবসায়ী ছিলেন। ভারতের প্রতিনিধি হয়ে অংশ নিয়েছিলেন ইন্টারন্যাশনাম কলোনিয়ল এক্সজিবিশনে। তাঁর সঙ্গেই ১৯৩১ সালে প্যারিস পাড়ি।

প্যারিস শহর আমূল বদলে দিল সদ্য কিশোরী অমলার জীবন। এ যেন এক নিয়তি নির্ধারিত পথচলা।  

প্রদর্শনীতে দেখা হল উদয় শঙ্করের সঙ্গে। তাঁর বাবাকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। বাবার সঙ্গেও অম-ও গিয়েছিলেন শঙ্কর গৃহে। অমলা ফ্রক পরেছিলেন। উদয় শঙ্করের মা হেমাঙ্গিনী দেবী তাঁকে শাড়ি উপহার দেন।

কিছুদিন পর উদয় শঙ্কর-এর ডান্স ট্রুপে তিনি যোগ দেন। ১ বছর ইউরোপ ট্যুর করেন গ্রুপের সঙ্গে। ১৪ টি দেশের ২০০ টি শহরে শো হয়েছিল।

১৯১৯ সালের ২৭ জুন জন্ম। যশোরের বাটাজোর গ্রামের অমলা নন্দী। বাবা চাইতেন তাঁর ছেলে-মেয়েরা প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে উঠুক। গ্রামকে জানুক। প্যারিস থেকে ফিরে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেও ফেলেন নিজের কলমে। বই হিসেবে প্রকাশিত হয় সেই দেখা। বইরের নাম ‘সাত সাগরের পারে’।  

নাচে প্রথাগত তালিম ছিল না। তাঁর নাচ শেখা অনেকটা যেন খেলার ছলেই। প্যারিসে থাকার সময় বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল রবু মানে রবিশংকরের সঙ্গে। তাঁর চেয়ে মাত্র ১ বছরের বড়। শঙ্করবাড়ির বাগানে দুজনে মেতে উঠতেন খেলায়।

একদিন রবু তাঁকে নাচের কথা জিজ্ঞাসা করেন। তিনি না বলেননি। বন্ধুকে বলেন, যদি দেখিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তিনি পারবেন। উদয় শঙ্করের কাছেই তালিম নেওয়া শুরু করেন তিনি। 

প্রথম মঞ্চ ‘কালীয়দমন’ প্রযোজনায়। কালীয় নাগের ভূমিকায়। শ্রীকৃষ্ণ হয়েছিলেন উদয় শঙ্কর নিজে।

১৯৩২ সালে দেশে ফিরে আসার পর আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। নাচের জগতে তাঁর কামব্যাক হয় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কথায়। ১৯৩৯-এ আলমোড়ায় ‘উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচার সেন্টার’-এ।    

১৯৪২- এ বিবাহ হয় উদয় শঙ্করের সঙ্গে। অমলা নন্দী থেকে চেনা হয়ে উঠলেন অমলাশঙ্কর নামে। তারপর থেকে নাচই তাঁর ভুবন। বহু সফল প্রযোজনায় তাঁকে প্রধান ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। উদয় শঙ্কর পরিচালিত কল্পনা-তে উমার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমলা শঙ্কর। কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হন। উদয় শঙ্করের পরম্পরাকে বহনের গুরু দায়িত্বকে নিজে তুলে নিয়েছিলেন কাঁধে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত।

ভারতীয় নৃত্যঘরানার ‘লিভিং লেজেন্ড’ অমলাশঙ্কর। তিনি আসলে একটি যুগ। ভারতীয় সংস্কৃতির বহমান ধারা। জীবন্ত ইতিহাস। শতায়ু কিংবদন্তিকে জন্মদিনের সশ্রদ্ধ প্রণাম।  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...