বাংলায় শিব বহু কাল ধরেই পূজিত হচ্ছেন। শৈবক্ষেত্রও রয়েছে অগনিত। তবে এ রাজ্যের সবচেয়ে বড় কালো পাথরের শিবলিঙ্গ কোথায় রয়েছে জানেন?
বাংলার ধানের ভান্ডারেই রয়েছে সেই শিব। সেই শিবলিঙ্গ আবার যে সে শিবলঙ্গ নয়! বয়সে অত্যন্ত প্রবীণ তিনি, আজ থেকে দেড় হাজার বছরেরও আগে শিবলিঙ্গ তৈরি হয়েছে অর্থাৎ বয়সে এটি ১৬০০ থেকে ১৭০০ বছরের প্রাচীণ। ইতিহাসবিদদের মতে, কুষাণ বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট কনিষ্ক এই শিবলিঙ্গের পুজো করতেন নিয়মিত। বর্ধমানে রয়েছে সেই শিবলিঙ্গ। এখানে মহাসমারোহে শিবরাত্রি পালন করা হয়, আজও শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে সেজে ওঠে মন্দির চত্ত্বর। মেলা বসে। পসরা সাজিয়ে বসে দোকান পাট। অগনিত ভক্ত সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় করেন।
রাজ্যের প্রসিদ্ধ শিব মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের আলমগঞ্জের বর্ধমানেশ্বর শিব মন্দির। বিশাল আকারের কারণে এই শিব ‘মোটা শিব’ বা ‘বুড়ো শিব’ নামেও পরিচিত। ১৯৭২ সালে এলাকায় পুকুর খনন করা কাজ চলছিল, সেই জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ চলছিল। সেইসময় হঠাৎই করেই পাথরের কিছু একটা জিনিসের গায়ে মাটি খোঁড়ার জিনিসের আঘাত লাগে। কৌতূহল বাড়ে শ্রমিকদের। ধীরে ধীরে মাটি খোঁড়া হয়। মাটির তলা থেকে বের হন মহাদেব, বেরিয়ে আসে বিশালাকার গৌরিপট্টসহ এক শিবলিঙ্গ। দেবতার জন্ম হয়। শিবলিঙ্গটি উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। ওজন ১৩ টনেরও বেশি। গোটাটাই একটিই নীরেট কালো পাথর নিপুনভাবে কেটে তৈরি। ক্রেনে করে তুলে পাশে স্থাপন করা হয় সেই শিবলিঙ্গ।
মন্দিরের কাছেই রয়েছে দুধপুকুর। সেই পুকুরে স্নান সেড়ে পুজো দেন ভক্তরা। এই শিবলিঙ্গ মাটি খুঁড়ে শ্রাবণ মাসে পাওয়া গিয়েছিল। তাই সেই মাসে এই শিবের আবির্ভাব দিবস পালন করা হয়। সেদিন হাজার হাজার পুণ্যার্থী গঙ্গা থেকে বাঁকে করে জল এনে শিবের মাথায় ঢালে। অগণিত ভক্তের ভিড় হয় মন্দিরে। মেলা বসে। কয়েকদিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলে।
এই শিবলিঙ্গের প্রাচীনত্ব নিয়ে ইতিহাসবিদদের মনে কোনও দ্বিমত নেই। তবে ঠিক কত বছরের প্রাচীন তা নিয়ে প্রামান্য কোনও তথ্য নেই। অনেকের মতে, এই শিবলিঙ্গ কনিষ্কের সময়ে। কনিষ্ক নিজে এই কালো শিবলিঙ্গে নিয়মিত পুজো করতেন। পরবর্তী সময়ে বন্যায় তা দামোদরে ভেসে আসে। তবে এত ভারি শিবলিঙ্গের পক্ষে নদীতে ভেসে আসার সম্ভাবনা নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। এত বড় শিবলিঙ্গ গোটা বিশ্বে খুব কমই রয়েছে। প্রাচীনত্বে অন্য সব শিবলিঙ্গকেই টেক্কা দিতে পারে বর্ধমানের আলমগঞ্জের 'মোটা শিব'। আদর করে এই শিবকে মোটা শিব বলা হলেও তা বর্ধমানেশ্বর শিব মন্দির নামেই পরিচিত।
ইতিহাসবিদদের মতে, এটিই এ রাজ্যের সবচেয়ে বড় কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। তাঁদের অনুমান, এই শিবলিঙ্গ বয়সে বাংলার অন্যতম প্রাচীন শিবলিঙ্গও বটে।