“লাট সাহেবের গীর্জা” নামটা কম-বেশি সবারই জানা। ডালহৌসি স্কোয়ারে ঢোকার মুখে সাদা এক শৃঙ্গ বিশিষ্ট গীর্জা চোখে পড়ে। হ্যাঁ, সেটিই হল “লাট সাহেবের গীর্জা”। কলকাতার বুকে প্রথম স্কটিশ চার্চ। এটি “Scotch Kirk” নামেও পরিচিত। স্কটিশ ভাষায় “kirk” অর্থ চার্চ। এই চার্চের আরেকটি নাম রয়েছে “সেন্ট অ্যান্ডরু চার্চ”। সেন্ট অ্যান্ডরুর জন্মদিনে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বর্তমানে যেখানে এই চার্চ অবস্থিত সেখানে এক সময় ওল্ড কোর্ট হাউস ছিল। তারও আগে সেখানে ছিল একটি চ্যারিটি স্কুল। এই স্কুলটি পরে মেয়রস কোর্ট এবং কলকাতার সুপ্রিম কোর্টে রূপান্তরিত হয়। এই কোর্টেই মহারাজা নন্দকুমারকে ১৭৭৫ সালে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। চার্চ থেকে ময়দান পর্যন্ত এখনও ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট নামে পরিচিত।
১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান প্রেসবিটারি গঠিত হয়। ঐ বছরই ওল্ড হাউসের ডিরেক্টর ফোর্ট উইলিয়ামের জেনারেলকে জানায় স্কটল্যান্ড চার্চের জন্য জুনিয়র চ্যাপলিন হিসেবে রেভারেন্ড জেমস ব্রায়াসকে নিযুক্ত করা হয়েছে। সেই সময় কোম্পানিতে ইংরেজদের পাশাপাশি স্কটিশ জনগণ প্রচুর পরিমাণে থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওল্ড কোর্ট হাউসের ডিরেক্টর চার্চের জন্য এক লাখ টাকা অনুদান দেয়।
ডালহৌসি স্কোয়ারের উত্তর-পূর্ব দিকে ৩০ নভেম্বর ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে চার্চের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক গভর্নর জেনারেল লর্ড ময়রা। চার্চের ডিজাইন করেছিল মেসার্স বার্ন, কুরি এন্ড কোং। যা ট্রাফালগার স্কোয়ারের সেন্ট মার্টিন ইন দ্য ফিল্ডস দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল।
চার্চটির সুউচ্চ শৃঙ্গ গড়ে তোলা এবং তার উপরের মোরগ নিয়ে একটি ঘটনা আছে। রেভারেন্ড জেমস ব্রায়াস কলকাতায় আসার পর সেন্ট জন চার্চের প্রথম বিশপ মিডলটনের সঙ্গে রেষারেষি শুরু হয়। চার্চের সুউচ্চ শিখর করা নিয়ে চার্চ অব ইংল্যান্ডের সঙ্গে স্কটিশ চার্চের গোলমালের সূত্রপাত। বিশপ মিডলটনের মনে করতেন ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে উচ্চতম শিখর বিশিষ্ট গীর্জা প্রতিষ্ঠার অধিকার একমাত্র চার্চ অব ইংল্যান্ডেরই থাকা উচিত। সেই কারণে চার্চ তৈরির ক্ষেত্রে তিনি নানা রকম বাধা দিতে থাকেন।
জেমস ব্রায়াস বিরক্ত হয়ে শুধু উঁচু শিখর করার সিদ্ধান্ত নেন না, সেই সঙ্গে একটি মোরগও চূড়ায় বসানোর কথা ঘোষণা করেন। এই কথা শুনে সরকার এবং বিশপ মিডলটন জানায় পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট এই চার্চের রক্ষণাবেক্ষণের কোন রকম দায়িত্ব নেবে না। তবে মোরগটি বর্তমান সময়েও ভাল রয়েছে।
জেমস ব্রায়াস চার্চের জন্মলগ্ন থেকে ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই চার্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানি সরকার থেকে ২২০০ টাকা অনুদান এবং জনগণের আর্থিক সাহায্যে চার্চের টাওয়ার ক্লকটি বসান হয়। ৭ ফুট উঁচু ভিতের উপর চার্চটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণ দিকের পোর্টিকো সুউচ্চ ডোরিক থাম দ্বারা সুসজ্জিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে চার্চের ভিতরে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। চার্চের ভিতরের ছবি তোলাও নিষিদ্ধ।