'নায়ক' সিনেমায় অরুণ চ্যাটার্জি ওরফে উত্তম কুমারের অভিনয় ভোলা যায় না। সেই সঙ্গে টাকার মাঝখানের অরুণের সেই দৃশ্য আজও দর্শকের চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। নোটের পাহাড়ের মাঝখানে দিশাহীন ভাবে তাঁকে আমরা দেখেছিলাম। নোটের দুনিয়া সত্যি এক অন্য ভুবন। চারিদিকে শুধু টাকা আর টাকা। তার মাঝে নিজেকে দেখতে কেমন লাগে? একটু অদ্ভুত তো লাগে। আর টাকার মিউজিয়াম হলে বিষয়টা কেমন হয়! দেখা যায় ছোঁয়া যায় না। শিহরণ জাগায়!
৮ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে রয়েছে টাকার যাদুঘর। যাদুই বটে! প্রবেশ করা মাত্র এক অন্য জগতে নিয়ে যায়। এখানে রয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রদর্শনশালা। 'দি আরবিআই মিউজিয়াম'। ১৯৩৪ সালে ৮ নম্বর কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটের এই বাড়িতেই সূচনা হয়েছিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। অল্প কিছুকাল পরে তারা উঠে যায় তৎকালীন বম্বে শহরে।
এক টাকার কয়েনের গেট দিয়ে ঢুকেই রয়েছে বিরাট অভ্যর্থনা কক্ষ। সেখানে আছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের দুষ্প্রাপ্য সব কারেন্সি নোটের ছবি এবং তাদের জন্ম বৃত্তান্ত। কিছু কিছু নোট প্রথম প্রকাশের সময় কিছু ভুল হয়। সেগুলি-সহ পরবর্তীতে সংশোধনী নোটের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে।
ছোট ছোট মডেল দিয়ে আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সময়ে কীভাবে বিনিময় প্রথার বিবর্তনের মাধ্যমে নোটের উৎপত্তি হয়েছে তাও চিত্রিত রয়েছে। প্রথমে শষ্য ছিল বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম। তারপর জিনিসপত্রের মাধ্যমে শুরু হয় বিনিময় প্রথা। ধীরে ধীরে আবির্ভাব হয় মুদ্রার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যখন মুদ্রা চালু হয়, ভারতেও সমসাময়িক সময়ে চালু হয় মুদ্রার ব্যবস্থা। খুব সুন্দরভাবে তা তুলে ধরা হয়েছে।
দীর্ঘকাল টাকার মান নির্ধারিত হয় সোনার মূল্য দিয়ে। মূল্যমানের সোনা জমা রাখা হত ভল্টে। মডেলের মাধ্যমে ভল্টের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। একসময় ভারত সরকার বন্ড ছাপাত সিডিও প্রেস থেকে। সেই মডেল রয়েছে মিউজিয়ামে। এছাড়া টাকা ছাপানোর মেশিনও দেখা যাবে।
মিউজিয়ামটি যে বাড়িটিতে রয়েছে সেটি স্থাপত্য হিসেবে খুবই সুন্দর। বাড়িটির একতলায় রয়েছে এই মিউজিয়াম। মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল ১০টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা। কোন প্রবেশ মূল্য নেই। ঠিকানা সেন্ট জোন্স চার্চের উল্টোদিকে। টাকার এক অনন্য দুনিয়া।