মঞ্চসম্রাট মনু দত্ত

বাংলা নাট্য জগৎ এর সম্রাট উৎপল দত্ত, মনু দত্ত কে বলেছিলেন মঞ্চসম্রাট। তাঁর দক্ষতা শুধু মাত্র মঞ্চ পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না পোশাক পরিকল্পনা, কল্পনা শক্তির দক্ষতাও মঞ্চে তাঁকে খ্যাতি লাভে সাহায্য করেছে। মঞ্চের সমস্ত মুশকিল আসানে তিনি ছিলেন প্রাণ পুরুষ। হাবিব তনবির, পরেশ রাওয়াল, ওম পুরি, নানা পাটেকর থেকে শুরু করে বাংলা রঙ্গমঞ্চের নাট্যনির্মাতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে তাঁর শিল্প ভাবনার আদান প্রদান ঘটেছে। ১৯৪৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহন করেন মনু দত্ত। মাত্র এক বছর বয়সে তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন। পিতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বসবাস করতে শুরু করেন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের কলাবাগান এলাকায়। ড্রেস ও সেটের সরঞ্জামের দোকান খোলেন কলকাতার  চারু মার্কেটে এবং দোকানের নাম রাখেন ষ্টুডিও সাপ্লাই। এই দোকান থেকে সিনেমা, নাটক, যাত্রা পোশাক, সেট, সরবরাহ শুরু হয় যা আজও বর্তমান।

  একদিন বাবা ধীরেন্দ্রনাথের হাত ধরে মনু দত্ত চলে গেলেন পি.এল.টি.নাট্যদলের কর্ণধার উৎপল দত্তের কাছে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বেশ সাহস করেই বলেন ছোট ছেলেটিকে একটু তৈরী করে দিতে। সেই ভাবেই উৎপল দত্তের ছত্রছায়ায় মনু দত্তের থিয়েটার যাত্রার সূত্রপাত। উৎপল দত্তের সংস্পর্শেই তিনি ইউরোপীয় থিয়েটারের মঞ্চস্থাপত্যকে কলকাতার মঞ্চে স্থাপন করার কঠিন দায়িত্ব পান। প্রায় ৩৫ বছর উৎপল দত্তের সমস্ত নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন মনু দত্ত। পি.এল.টি নাট্যদলে উৎপল দত্তের নির্দেশনায় টিনের তরোয়াল,সূর্যশিকার,চৈতালি রাতের স্বপ্ন, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, ম্যাকবেথ প্রমুখ নাটকে তিনি মঞ্চ নির্মাণ করেছেন। তিনি একাধিক ছবিতে ও কাজ করেছেন। সে গুলির মধ্যে অন্যতম শ্বেত পাথরের থালা, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না। তিনি কাজ করেছেন বাংলার কিছু বিখ্যাত নাট্যকারের সঙ্গে যেমন উৎপল দত্ত, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়,মনোজ মিত্র, অশোক মুখ্যেপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী, রমাপ্রসাদ বণিক প্রমুখ। তাঁর মঞ্চ নির্মানের শেষ নাটক হল আলোক দেবের নির্দেশনায় 'পদ্মা নদীর মাঝি'। মঞ্চ শিল্পের কাজের জন্য মনু দত্ত রাশিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশে ভ্রমন করেছেন। শেষ দিকের জীবন কাটিয়েছেন টালিগঞ্জের কে.জি.রায় লেনে। শেষের কিছু দিন ছিলেন বাঁশদ্রোণীর ব্রক্ষপুরের ফ্ল্যাটে। তাঁর মেজাজ ছিল সাহেবিয়ানা কিন্তু মন ছিল ছোট শিশুর মতো। নিজে খেতে এবং অন্যকে খাওয়াতে খুব ভালোবাসতেন। মৃত্যু কালে তাঁর দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট তাঁর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু আজও বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে থেকে গেছে তাঁর নাম।

 

 

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...