গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা; আওয়াজ খানা দিচ্ছে হানা দিল্লি থেকে বর্মা, সুকুমার রায়-এর গানের গুঁতো খাননি, থুড়ি পড়েননি এমন বাঙালির দেখা মেলা ভার কিন্তু সত্যি সত্যি কি কখনো সুকুমার কাউকে গান দিয়ে গুঁতিয়েছিলেন? ওঁর রচনায় যে ধরনের হাস্যরস এবং বুদ্ধিমত্তার ছাপ লক্ষ্য করা যায় তার থেকে এটা বুঝে নিতে বিশেষ অসুবিধে হয়না যে বাস্তবেই মানুষটি ছিলেন রসিক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক সুনীতি কুমার চটোপাধ্যায় ছিলেন সুকুমার রায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু, বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা চলতো দুই বন্ধুর, সাথে থাকতেন আরও অনেকে। একদিন সুকুমার সুনীতি বাবুকে জিজ্ঞাসা করলেন আমার সাথে কি একটা জায়গায় যাবে? কোথায় যাবো? আগেই কয়েকবার সুকুমারের সঙ্গী হয়ে যারপরনাই বিব্রত হয়েছিলেন সুনীতি চাটুজ্যে, তাই সুকুমার জানালেন যে তেমন কিছুই না তার এক বন্ধু মারা গেছেন আর সেই কারণেই ব্রাহ্ম সমাজের শোকসভায় যেতে হবে, সুনীতি বাবু যেতে রাজি ছিলেন না তাই সুকুমার তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে তিনি এমন কিছু করে বসবেননা যাতে সুনীতি বাবু বিব্রত বোধ করেন। তো এক সময়ে দুজনে গিয়ে উপস্থিত হলেন ব্রাহ্ম সমাজের শোকসভায়, সেখানে অনেকেই শোক প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছেন কেউ কেউ ব্রহ্মসংগীত গাইছেন, শেষে সুকুমার বলে উঠলেন তিনিও একটা গান গাইতে চান সবাই বিশেষ আগ্রহ দেখাতে সুকুমার হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান তো শুরু করলেন কিন্তু একটাই লাইন গেয়ে চলেছেন “কাঁদো রে মন কাঁদো রে”, অন্তত বার কুড়ি গেয়ে ফেলছেন এই একই লাইন, শ্রোতারাও অবাক তখনই সুকুমার গেয়ে উঠলেন গানের দ্বিতীয় লাইনটি “আমার মন বাগানের সখের তরুর ফল খেয়ে যায় বাঁদরে”, এই 'গানের গুঁতো' সুনীতি বাবু সহ্য করতে পারেননি, আর সেদিনের পর থেকে সুকুমার রায়ের সাথে তিনি আর কোনো অনুষ্ঠানে একসঙ্গে যাননি বলেই শোনা যায়।