সারি সারি জেলের কুঠুরি। অন্ধকার কারাগার। এই কারাগারে যন্ত্রণাদগ্ধ হয়েছেন সেই মানুষগুলো যাঁদের লড়াই আমাদের দেখিয়েছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা আসলে একটা অনন্ত পথ, যে পথ আমাদের জন্যে তৈরী করে দিয়েছিলেন দেশ-মাতৃকার সন্তানেরা।
স্বাধীনতা আন্দোলনে আলিপুর জেলের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আলিপুর জেলে দীর্ঘ সময় কারাবাস ভোগ করেছেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, দীনেশ গুপ্ত, দীনেশ চন্দ্র মজুমদার। ইংরেজদের অত্যাচারের সেসব অন্ধকার দিনের সাক্ষী এই আলিপুর জেল। এর বয়স ১৬৬ বছর।
এতদিন পর্যন্ত এই সব যন্ত্রণা-আখ্যানের কথা বন্দী হয়েছিল শুধু এই কারাগারে। সরকারী উদ্যোগে এই কারাগার এখন জাদুঘর। ইতিহাসের জিয়নকাঠির স্পর্শে আলিপুর কারাগার এখন মিউজিয়াম।
আদালতের নির্দেশ ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রায় ১০৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হল এই মিউজিয়াম। সাধারণ মানুষের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছে এই জাদুঘর।
এই কারাগারে বন্দী মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস। সেই ইতিহাস মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
আদালতের নির্দেশে হেরিটেজ সাইটকে অক্ষত রেখেই নতুন নির্মাণের কাজ করা হয়েছে। আলিপুর জেলের বিশেষ কুঠুরি অনেক আগে থেকেই হেরিটেজ সাইট ছিল। প্রবেশাধিকার ছিল না সাধারণ মানুষের। এখন সেই প্রবেশ অধিকার দেওয়া হলো জনসাধারণকে।
কারাগারের ভেতরে প্রবেশ মূল্য ধার্য করা হয়েছে ৩০ টাকা। একটি বিশেষ লাইট এন্ড সাউন্ড শো দেখানো হয় এখানে। তার টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা।
জাদুঘরের ভেতরে একটি লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, প্রদর্শনীকেন্দ্র যুক্ত করা হয়েছে।
১৯০৬ সালে আদি গঙ্গার পাড়ে তৈরি করা হয়েছিল এই কারাগার। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস জহরলাল নেহরু, বিধানচন্দ্র রায়, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরী দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এখানে। ফাঁসির মঞ্চও সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ব্রিটিশদের সময়কার ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে এই লাল প্রাচীরের ভেতরে।
মিউজিয়ামে পরিবর্তিত হওয়ার পর এই আলিপুর কারাগারে কাটানো যেতে পারে একটি দিন। ইতিহাসের স্পর্শ নিয়ে মানসভ্রমণ করা যেতে পারে একটা অন্ধকার সময়, যা আমাদের নিজেদের অস্তিত্বকে চিনতে সাহায্য করে ।