শহরের ঐতিহ্য

১৮এপ্রিল ছিল বিশ্ব হেরিটেজ দিবস। রাজ্য সরকারের হেরিটেজ কমিশনের তরফে এই উপলক্ষে অবনীন্দ্র সভাঘরে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। এই শহরে তথা বাংলায় প্রচুর ঐতিহ্যশালী ভবন বা স্মারক রয়েছে, যেগুলি সংস্কারের প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের তরফে সেগুলির সংস্কার করা হয়, যদি কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি সেই সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদন জানান। উক্ত সেমিনারে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারপার্সন শুভাপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় জানান, কমিশনের কাজ, রাজ্যের কোথাও কোনও ঐতিহ্যশালী বিষয়বস্তু নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর পেলে তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া। কমিশনের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার অধিকার নেই। কারো আবেদনের মাধ্যমে সেই জেলার জেলাশাসককে বিষয়টি জানানো হয়। জেলাশাসকের অনুমতি পেলে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়।

   রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যশালী ভবনের সংরক্ষণের কাজ হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গড়িয়া শ্মশানের শ্ৰীমন্ত সওদাগরের তৈরী টেরাকোটার মন্দির, পাণ্ডুয়ার রঘুনাথ মন্দির, হুগলি ইমামবাড়া, মংপুর রবীন্দ্রভবন, কালিম্পঙের গ্রাহামস চ্যাপেল, পশ্চিম মেদিনীপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ী প্রভৃতি। এছাড়াও কলকাতায় ঐতিহ্যশালী ভবনের মধ্যে মহাকরণ, লালবাজার, মার্বেল প্যালেস, সহ প্রচুর প্রাচীন ভবন রয়েছে। উক্ত ভবনগুলোর সংরক্ষণের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সেই বিষয়ে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন বিভিন্ন সময়ে সুপারিশ করে থাকে। সেই মত কাজ করা হয়। শুভাপ্রসন্ন জানান, রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর শহরের বিশিষ্ট ঐতিহ্যশালী ভবন মহাকরণ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই কাজ করা হচ্ছে। মহাকরণ সংস্কারের কাজ শেষ হতে এখনও আরও কিছুটা সময় লাগবে। এই কাজের জন্য একটি হাইপাওয়ার কমিটি গঠন করে তাদের ওপরেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে হেরিটেজ কমিশনের তরফে মহাকরণের কাজে প্রত্যক্ষভাবে কমিশনের তেমন কাজ নেই। তেমনি ভিকটোরিয়া মেমোরিয়ালের সংরক্ষণের জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে প্রচুর সাহায্য আসে। তাই এই ভবনটির সংরক্ষণের বিষয়েও রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কোনও ভূমিকা নেই।

   ঐতিহ্যশালী ভবনগুলোর মধ্যে ময়দান ও রবীন্দ্রসদনের সংযোগস্থলে চৌরঙ্গি রোডের ওপর অবস্থিত সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল উল্লেখযোগ্য। ভারতের স্বাধীনতার ঠিক ১০০ বছর আগে তৈরী হয়েছিল। অন্দরমহলে রয়েছে সুন্দর গথিক নকশা। সম্প্রতি প্যারিসের নোটরডাম গির্জায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আমাদের শহরের এই বিখ্যাত চার্চটির সম্পর্কে অনেকেই চিন্তিত হচ্ছে। কতটা সুরক্ষিত রয়েছে আমাদের শহরের এই চার্চটির সুরক্ষা ব্যবস্থা- জানা গিয়েছে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে রয়েছে ১৫টি আগুন নেভানোর যন্ত্র। আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি বছর এই গির্জায় ফায়ার অডিট হয়। আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়লে সেগুলো বদলানো হয় বলেও জানানো হয়েছে ক্যাথিড্রালের পক্ষ থেকে।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...