অর্থশাস্ত্রের মত অনুযায়ী, মন্ত্রীবিহীন রাজার নিয়ন্ত্রণে থাকতেন বিশেষ কিছু ধরনের গুপ্তচর। এই ধরনের রাজারা সাধারণত গুপ্তচরদের পরামর্শ মত রাজকার্য চালানোর ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। এমনকী এদের মন্ত্রী থাকলেও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এরা গুপ্তচরদের ওপর নির্ভর করত। এই বিশেষ ধরনের গুপ্তচরদের নিয়ে রাজা একটি সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন, যাকে সঞ্চার নামে অভিহিত করা হত। চাণক্য বা কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রমতে এই সঞ্চার গুপ্তচররা রাজকার্য এবং রাজার যুদ্ধবিদ্যার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতেন। এই ধরনের গুপ্তচরদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতেন। এঁদের জন্য রাজপ্রাসাদে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুব্যবস্থা করা থাকত।
চাণক্যের অর্থশাস্ত্রমতে এই ধরনের গুপ্তচররা সব ক্ষেত্রেই বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হতেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর বিশেষ পরীক্ষাও দিতে হত এঁদের। সেই পরীক্ষায় পাশ করলে তবে এই ধরনের গুপ্তচরদের নিয়োগ করা হত।
এমনই বিশেষ ধরনের সঞ্চার গুপ্তচর ছিলেন তীক্ষণ। এই ধরনের গুপ্তচর-এর একটি বিশেষ পারদর্শিতা থাকতে হত।
প্রয়োজনে অর্থাৎ রাজ্যের প্রয়োজনে বা রাজার প্রাণ বাঁচানোর লক্ষ্যে এরা পশুদের সঙ্গেও যুদ্ধ করতে বাধ্য হতেন। বিশেষ করে বাঘ এবং হাতিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হতো এঁদের। এঁরা মূলত বীর গুপ্তচর হতেন। বীরত্বের কারণেই এঁরা সুযোগ পেতেন গুপ্তচর হওয়ার। তবে পশু-পাখিদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য এঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হত রাজ্যের তরফে। সেইসব প্রশিক্ষণ নিষ্ঠার সঙ্গে নিতে হত এঁদের। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে এঁরা কাজ করার সুযোগ পেতেন। এমনই ছিলেন তীক্ষণ গুপ্তচর।
রাজার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জীবন বেছে নিতেন এই ধরনের গুপ্তচররা। চাণক্য রচিত অর্থশাস্ত্রমতে, শৌর্য সমন্বিত অত্যন্ত সাহসী এমনকী জীবিকা অর্জনের জন্য হিংস্র বাঘ বা হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক এমন বিশেষ ক্ষমতাবান পুরুষ গুপ্তচরের কাজে নিযুক্ত হলে তাঁদের তীক্ষণ গুপ্তচর বলা হত। এঁরা সাধারণত রাজার রক্ষার কাজ করতেন। শোনা গেছে রাজার অনেক শত্রুরা অনেক ক্ষেত্রে রাজার ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন হিংস্র পশুর মাধ্যমে। রাজার এই প্রাণ সংশয় থেকে রক্ষা করার জন্যই নিয়োগ করা হতো এই বিশেষ ধরনের তীক্ষণ গুপ্তচরদের।
এঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হত হিংস্র পশুর বিরুদ্ধে। রাজার প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে বাঘ বা উন্মত্ত হাতির হাতে প্রাণ দিয়েছিলেন অনেকেই। তবুও এই ধরনের গুপ্তচরদের কথা ইতিহাসে বিশেষ পাওয়া যায় না। এরা নিঃশব্দে যুদ্ধ করে রাজাকে রক্ষা করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন, বদলে ইতিহাস হয়তো তাদের মনে রাখেনি কিন্তু এই নীরব ইতিহাসের পাতা জুড়ে আজও এই ধরনের গুপ্তচরদের কথা উড়ে বেড়ায়।