একবার রাজা পড়েছেন মহা বিপদে। একটি বিশেষ কাজে তাঁকে পাঠাতে হবে এক গুপ্তচরকে। সম্ভবত রাজ্যের চাষের জমিতে কোন বিদ্রোহের প্রস্তুতি চলছে। অনেক চেষ্টা করেও রাজা কিছুতেই সেই ঘটনার অন্দরমহল পর্যন্ত পৌঁছতে পারছেন না। এমন এক গুপ্তচর তাঁর দরকার, যাঁর কৃষিকাজ সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই গুপ্তচর হবেন সাহসী, সেই গুপ্তচরের যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা থাকবে। নিজের ক্ষেত্র বাদ দিয়েওতিনি প্রজ্ঞার অধিকারী হবেন।
এমন গুপ্তচর পাওয়া কী সহজ কথা! রাজা তাঁর গুপ্তচরসংক্রান্ত সংস্থা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। এমন বিশেষ গুপ্তচর পাওয়া যাবে কোথা থেকে? অবশেষে পরামর্শ করে ঠিক হল, এমন কাউকে খুঁজতে হবে যে কৃষিকাজে যথেষ্ট নিপুণ অথচ কোন কারনে এই মুহূর্তে কৃষিকাজ করতে পারছেন না। আবার তাঁর নিজের যথেষ্ট প্রজ্ঞাও রয়েছে। সাহসীও হবেন তিনি।
তখন ঠিক করা হল, এই ধরনের গুপ্তচরদের নাম দেওয়া হবে গৃহপতিক। চাণক্য রচিত অর্থশাস্ত্র মতে এঁরা সচরাচর গৃহস্থ হতেন। এদের নিজেদের সংসারের প্রতি ভালোবাসাও থাকত। তবে যে কাজে এরা নিপুণ হতেন, সেই কাজ থেকে কোনমতে বিচ্যুত হয়েছেন। এদের বলা হত গৃহপতিক গুপ্তচর। তবে কাজ বলতে এখানে বিশেষ করে কৃষিকর্মের কথাই বলা হয়েছে।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রমতে নিজেদের বৃত্তি বা কাজ অর্থাৎ কৃষিকর্মে এঁরা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছেন, অর্থাৎ কৃষি কাজ থেকে বর্তমানে তাঁরা বিচ্যুত, এদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সাধারণত রাজা এদের কোন নির্দিষ্ট জমিতে থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন। এরা কিন্তু দলগতভাবে গুপ্তচরের কাজ করতেন। প্রয়োজনে এঁরা একা কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতেন। কিন্তু রাজা যে ভূমিটি এদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিতেন, সেখানে দলগতভাবে থাকতে হতো এঁদের। তারপর রাজার গুপ্তচর বৃত্তির কাজে এঁরা সাহায্য করতেন।
তবে কৃষিকাজ করা থেকে বিরত হলেই এই ধরনের গুপ্তচর হওয়ার সুযোগ পেতেন না। গৃহপতিক গুপ্তচর হতে গেলে প্রয়োজন ছিল গাঢ় প্রজ্ঞার এবং যথেষ্ট সাহসের।
চাণক্যের মতে যে সমস্ত ব্যক্তিরা কৃষিকাজ থেকে বিরত হতেন তাদের দলগত ভাবে কাজ করার অভ্যাস থাকার কথা। সাধারণত সেই সময় দলগতভাবেই কৃষি কাজ করা হতো। তাই কৃষিকাজ করার পরেও এই ব্যক্তিদের দলগতভাবেই থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হতো। দলগতভাবে থাকার এই ক্ষমতাকে ব্যবহার করি মূলত গুপ্তচরবৃত্তি করতে হতো ওঁদের।
তবে যে কোন গুপ্তচর হতে গেলেই প্রয়োজন ছিল সাহসের। সাহস বিনা গুপ্তচরবৃত্তি সম্ভব ছিল না, এই কথা চাণক্যের অর্থশাস্ত্রেও উল্লেখ রয়েছে। দলগতভাবে গুপ্তচরবৃত্তি করার ক্ষেত্রে দলের প্রত্যেকটি মানুষের সাহসিকতা ও প্রজ্ঞার প্রয়োজন ছিল।
তবে তৎকালীন সমাজে কৃষিকাজকে যথেষ্ট উচ্চ স্তরের কাজ হিসেবেই দেখা হতো এই প্রমাণ অর্থশাস্ত্রে পাওয়া গেছে। সে কারণেই কৃষকদের মধ্যেও প্রজ্ঞাসম্পন্ন মানুষ ছিলেন, সঠিক প্রজ্ঞা সম্পন্ন মানুষদের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করা হতো গৃহপতিক গুপ্তচরদের।
তারপর নির্বাচিত গুপ্তচরদের কাজের ভিত্তিতে বেতন স্থির করা হত। যুদ্ধ এবং অন্যন্য ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা ছিল এই গুপ্তচরদের।