মেধাবী, বিশেষ বিদ্যায় পারদর্শী কিন্তু অনাথ ছাত্ররা হত রাজার সত্রী গুপ্তচর

চাণক্য বা কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্র মতে গুপ্তচর নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মন্ত্রী এবং অমাত্যরা নির্ধারণ করলেও অনেক সময়ই রাজা বিপদের মুখে পড়তেন এই অমাত্যদের  কারণেই। অনেক ক্ষেত্রেই রাজা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন মন্ত্রীদের দ্বারা। তখন এই রাজাকে রক্ষা করেছেন গুপ্তচররা। এমনটাও দেখা গেছে, যে মন্ত্রী এবং অমাত্যদের দীর্ঘ সময় ধরে রাজা বিশ্বাস করে আসছেন, সেই সকল

মন্ত্রীরাই প্রয়োজনে রাজাকে ঠকিয়েছেন। শত্রুপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজার প্রাণ সংশয় ঘটানোর চেষ্টা করেছেন।

ইতিহাসের বিভিন্ন ক্ষেত্র ঘাঁটলে এমন উদাহরণ ভুরিভুরি দেখতে পাওয়া যায়। রাজা তখন গুপ্তচরদের বিশ্বাস করতে বাধ্য হতেন। অনেক সময় এই গুপ্তচররাই প্রাণ বাঁচিয়েছেন রাজার। রাজকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে এমন গুপ্তচরদের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকত। এই ধরনের গুপ্তচররা সঞ্চার গুপ্তচর নামে পরিচিত। অর্থশাস্ত্রে এঁদের এমন নামকরণ করা হয়েছে।

এই সঞ্চার গুপ্তচরদের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম যে গুপ্তচরের কথা অর্থশাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন সত্রী গুপ্তচর। মূলত ছাত্রাবস্থায় যোগ দেওয়া গুপ্তচরদের বলা হত সত্রী। তবে ছাত্রাবস্থায় থাকলেই এই বিশেষ ধরনের গুপ্তচর হওয়ার সুযোগ পাওয়া যেত না। সত্রী গুপ্তচর হওয়ার জন্য পূরণ করতে হত বিশেষ কিছু শর্ত। সত্রী গুপ্তচররা মূলত রাষ্ট্র অর্থাৎ রাজার দ্বারা পালিত হতো।  এরা অনাথ, পিতৃমাতৃহীন। গুপ্তচর  হওয়ার জন্য এঁদের বিশেষ যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হতো।

বিশেষ কোনও পারদর্শিতা বা বিদ্যা না থাকলে এই ধরনের গুপ্তচর হওয়া সম্ভব ছিল না। যেমন লক্ষণ বিদ্যা, অঙ্গ-বিদ্যা,  জম্ভক বিদ্যা, ইন্দ্রজাল বিদ্যা, আশ্রম বিদ্যা, অন্তর-চক্র বিদ্যা, সংসর্গ বিদ্যার মত বিশেষ বিদ্যায় পারদর্শী হতে হত এই ধরনের গুপ্তচরদের।

রাজার সামনে এই কিশোর বা কিশোরী গুপ্তচরদের পরীক্ষা দিতে হত। বিশেষ বিদ্যায় পারদর্শী কি না তা নির্ধারণ করেই এদের নিয়োগ করতেন। এই পরীক্ষা আয়োজন করা হত অত্যন্ত গোপনে। মন্ত্রী বা অমাত্যরা এই পরীক্ষায় উপস্থিত থাকতেন না। তাদের অনুপস্থিতিতে এই সকল বিদ্যার যেকোনও একটি বা দুটি পরীক্ষা করতে রাজা নিজে। যদিও চাণক্যের অর্থশাস্ত্রমতে অনেক সময় রাজার বিশেষ বিশ্বস্ত গুপ্তচররা এই বিদ্যা পরীক্ষার সময় উপস্থিত থাকতেন। রাজা পরীক্ষা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে এদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। সেখানে দিতে হত বিশ্বাসযোগ্যতার পরীক্ষাও। যেহেতু এঁরা ছোটবেলা থেকেই রাষ্ট্র কর্তৃক পালিত হতেন তাই রাজপ্রাসাদের আশেপাশেই এদের থাকার ব্যবস্থা করা হত। কিশোর বয়স থেকে গুপ্তচরের কাজ করতেন বলে সাধারণত এই ধরনের গুপ্তচররা সারা জীবন রাজার বিশ্বস্ত হিসেবে কাজ করে যেতেন। সত্রী সঞ্চার-গুপ্তচরেদের কথা ইতিহাসের পাতাতেও বারবার পাওয়া গেছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...