এক রাজার ওপর একবার কঠিন আঘাত হানা হয়েছিল। সেই রাজার জীবন সংশয় তৈরি হয়েছিল। এক গুপ্তচরের কথামতো রাজা কিছুটা নিজের সুরক্ষা করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি সেই যাত্রায় বেঁচে যান। এদিকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসার পর রাজা জানতে পারেন যে তাঁর সঙ্গে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাঁর নিজেরই সভাসদদের মধ্যে কেউ। রাজা তখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা চিন্তা করেন। তিনি বিশেষ ধরনের গুপ্তচর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কারণ এক গুপ্তচরের কথাতেই রাজার জীবন রক্ষা হয়েছিল।
সেই গুপ্তচারের সাহায্যে রাজা খুঁজে বের করেছিলেন সেই বিশ্বাসঘাতককে মন্ত্রীদের মধ্যে থেকে। রাজা বুঝতে পারেন যে অমাত্য এবং মন্ত্রীদের তিনি গুপ্তচরদের নিয়ন্ত্রণ করার কাজ দিয়েছিলেন সেই অমাত্য এবং মন্ত্রীরাই রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল।
চাণক্য রচিত অর্থশাস্ত্রে এই ধরনের গুপ্তচরদের সঞ্চার নামে অভিহিত করা হয়েছে। রাজার বিশেষ প্রয়োজনে মন্ত্রী অর্থাৎ অমাত্যদের শুদ্ধতা বিচারের জন্য যে সকল গুপ্তচরদের নিয়োগ করা হতো তাঁদের সঞ্চার বলা হত। এইসব গুপ্তচর যে রাজার নিয়ন্ত্রণে থাকতেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই রাজারা মন্ত্রীবিহীন হতেন। এই ধরনের গুপ্তচরদের ক্ষমতাও অন্যান্য গুপ্তচরদের থেকে অনেকটা বেশি থাকতো। এমনকি এই গুপ্তচররা রাজার সঙ্গে সরাসরি রাজার বসবাসস্থলে বাস করতে পারতেন। স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্রে এই ধরনের গুপ্তচরদের স্বাধীন বিচরণ থাকতো।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই ধরনের গুপ্তচররা রাজার বিভিন্ন কাজকর্মেও সাহায্য করেছেন। তবে রাজার প্রাণ রক্ষার জন্যই মূলত এদের নিয়োগ করা হতো। এদের অন্য আরেকটা কাজের মধ্যে ছিল রাজার মন্ত্রী এবং অমাত্যদের শুদ্ধতা বিচার করা। কোন মন্ত্রী বা সভাসদ কতটা বিশ্বস্ত তা অনুধাবন করার দায়িত্ব দেওয়া থাকত এই সঞ্চার গুপ্তচরদের ওপর। এই ধরনের গুপ্তচররা সবসময়ই রাজার কাছাকাছি থাকতেন। অর্থশাস্ত্র মতেই এই ধরনের গুপ্তচররা সবচেয়ে বেশি ঈর্ষার শিকার হতেন। এরা যেহেতু রাজার একেবারে কাছাকাছি অবস্থান করতেন তাই অনেক ক্ষেত্রেই মন্ত্রী বা সভাসদদের থেকে বিরোধিতা সহ্য করতে হয়েছে এই ধরনের গুপ্তচরদের। তবে মূলত রাজার সহযোগিতায় এই ধরনের গুপ্তচররা নিজেদের কাজ সম্পন্ন করতেন। রাজাও বিশেষ প্রয়োজনে এই ধরনের গুপ্তচরদের ওপর নির্ভর করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন।
মোট চার ধরনের সঞ্চার গুপ্তচর এর নাম পাওয়া যায় অর্থশাস্ত্রে। সত্রী, দ্বিখন, রসদ এবং ভিক্ষুকী। এদের সকলেরই কাজ ছিল রাজার কাছাকাছি থাকা এবং রাজাকে যে কোনো ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করা, এঁরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করতেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। রাজাকে কোন বিপদের আগাম খবর দেওয়া এই গুপ্তচরদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল। এই ধরনের ক্ষেত্রে মহিলা গুপ্তচর নিয়োগেরও প্রথা ছিল।
অর্থশাস্ত্র মতে রাজার কাছাকাছি থাকতে হতো বলে এই ধরনের গুপ্তচরদের বেতন হতো সব থেকে বেশি। ইতিহাসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধরনের গুপ্তচরেদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পাওয়া গেছে।