কথায় আছে স্নেহ অতি বিষম বস্তু। কিন্তু কোন মানুষ যদি একেবারে স্নেহবিহীন হয়! প্রয়োজনে সে হত্যা করতে পারে অন্য মানুষদের! নিঃসংকচে বিষ প্রয়োগে শেষ করে দিতে পারে প্রাণ। এমন মানুষদেরই গুপ্তচর হিসেবে পছন্দ করতেন রাজা। চাণক্য বা কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রে এই মানুষদের বলা হত রসদ গুপ্তচর। এঁরা রাজার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতেন। এই গুপ্তচররা সংস্থার অন্তর্গত। সংস্থার অন্যান্য গুপ্তচররা যেমন রাজার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতেন এই ধরনের গুপ্তচরাও রাজপ্রাসাদের মধ্যে বাস করতেন এবং রাজাকে রাজকার্য চালানোর ক্ষেত্রে ও রাজ-শত্রু নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরাসরি সাহায্য করতেন।
চাণক্য বা কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রে এই ধরনের গুপ্তচরদের রসদ গুপ্তচর বলা হত। অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী এই ধরনের গুপ্তচর হওয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ। স্নেহবিহীন মানুষ হতে হয়। মানুষের মধ্যে মানবিক অনুভূতি থাকবে এমনটাই কাম্য। কিন্তু রসদ গুপ্তচরদের নির্বাচনের সময় যে গুণটি বর্জন করার ক্ষমতা দেখা হত তা হলেও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি স্নেহ বা ভালোবাসা না থাকা।
এই ধরনের গুপ্তচররা নিষ্ঠুর হতেন। প্রয়েজনে এঁরা আপনজনকেও হত্যা করতে পারতেন। এঁরা শুধুমাত্র রাজার প্রতি দায়বদ্ধ থাকতেন। অর্থশাস্ত্রমতে আত্মীয়-স্বজনের প্রতি স্নেহবিহীন অত্যন্ত ক্রুর ও উৎসাহীন স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তি যিনি নিঃসংকচে শত্রুকে রস বা বিষ প্রয়োগ করতে সক্ষম এমন ব্যক্তিরা এই ধরনের গুপ্তচর হওয়ার সুযোগ পেতেন।
রাজাকে কাজ চালানোর জন্যে এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে যখন এরূপ নিষ্ঠুর মানুষদের প্রয়োজন পড়েছে, যাঁরা নির্দ্বিধায় ক্রুর হতে সক্ষম। শুধুমাত্র রাজার প্রতি এবং রাজত্বের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার জন্য যে কোন মানবিক গুণ বিসর্জন দিতে সক্ষম। অর্থশাস্ত্র মতে এই ধরনের গুপ্তচররা রাজার সবথেকে বিশ্বস্ত গুপ্তচর হিসেবে পরিগণিত হতেন। এঁদের নিষ্ঠুরতাই ছিল এঁদের কাজ পাওয়ার মাপকাঠি তাই সাধারণত এঁদের রাজা বাদ দিয়ে অন্য কেউ বিশ্বাস করতেন না। জীবন চালানোর জন্য এঁদের রাজার বিশ্বাস-এর উপর বা রাজার বিশ্বস্ততার ওপর নির্ভর করতে হতো। এই ধরনের গুপ্তচররা রাজার সবচেয়ে কাছের মানুষ হতেন। অনেক রাজার প্রাণ বাঁচানোর নিদর্শন পাওয়া গেছে এই ধরনের গুপ্তচরেদের মাধ্যমে। ইতিহাসের পাতায় এঁরা নিষ্ঠুর মানুষ হিসেবে উল্লিখিত থাকলেও আসলে রাজার নির্দেশেই জীবন কাটাতেন এঁরা। রাজার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং রাজ্য চালানোর প্রতি নিষ্ঠা এঁদের নিষ্ঠুর করেছিল কিন্তু এরাই প্রয়োজনে রাজার প্রাণ বাঁচিয়েছেন । ইতিহাসের পাতায় এঁদের জীবনচর্চা কলঙ্কিত অধ্যায় হলেও তা ইতিহাসকে সুরক্ষিত রেখেছে।