নেতাজীকে বাঁচাতে স্বামীকে হত্যা করেছিলেন নিজের হাতে, আজাদহিন্দ বাহিনীর গুপ্তচর নীরা

জেলে বন্দী আই.এন.এ-র সদস্যা। তাঁর হাতে পায়ে শিকল পরানো রয়েছে। সারা রাত ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন মেয়েটি। সকালে যখন পুলিশ এসে জোর করে শিকল খোলার চেষ্টা করছেন, ব্যথায় কাতরাচ্ছে মেয়েটা। একবার একটা ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করায় পায়ে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে মেয়েটা। বাইরে পুলিশ তখন হাসছে যন্ত্রণায় কাতরানো মেয়েটাকে দেখে। এই অপমান নিতে না পেরে পুলিশের গায়ে থুতু ছিটিয়ে দেয় সেই সাহসী মেয়ে। তিনি নীরা আর্য। আই এন এর গুপ্তচর। নেতাজীর শিষ্যা।

উত্তরপ্রদেশের বাগপতে জন্ম নীরার। বাবা শেঠ ছজুমল ছিলেন ব্যবসায়ী। নীরার অন্তরে দেশপ্রেমের আসন অনেক ছোট থেকেই সুনির্দিষ্ট ছিল। তাই বাবার ব্যবসায় কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু নীরার বাবা দেশসেবার বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। অল্প বয়সের নীরার বিয়ে হয় একজন ইংরেজ সেবক সিআইডির কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস। নীরা আর্যর স্বামী ছিলেন ইংরেজদের অনুগত। তাঁর ওপরেই দায়িত্ব ছিল নেতাজীকে হত্যা করার। সেই কারণেই তিনি সস্ত্রীক রেঙ্গুনে এসেছিলেন। রেঙ্গুনে তখন নেতাজী স্বাধীনতার জন্যে বাহিনী প্রস্তুত করছিলেন। স্বামীকে লুকিয়েই তিনি আই.এন.এ অর্থাৎ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদান করেন। সেখানেই প্রথম দেখা সুভাষ বসু্র সঙ্গে। তাঁর কথা, তাঁর দেশসেবার ইচ্ছে অনুপ্রাণিত করেছিল নীরাকে। নেতাজীকে হৃদয়ে স্থান জিতেছিলেন সেই সময় থেকেই।

এদিকে নীরার স্বামী চেষ্টা করছেন নেতাজীকে হত্যা করার। ষড়যন্ত্র চলছে। নীরা তখন আই এন এর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছেন। বাড়িতেই জানতে পারেন স্বামী ও ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের কথা।নাহ কোনও ঝুঁকি নেননি নীরা। স্বামীকে হত্যা করেছিলেন নিজের হাতে। দেশের রক্ষার থেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কখনোই দামী হয়নি নীরার কাছে।

স্বামীকে নিজের হাতে হত্যা করা, আই এন এর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার জন্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জেলে বন্দী হয়ে অত্যাচার সহ্য করেছিলেন তিনি। ব্রিটিশ পুলিশরা যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করে যে নেতাজী কোথায়, দৃঢ়তার সঙ্গে উত্তর দিয়েছিলেন তিনি যে নেতাজী তাঁর হৃদয়ে রয়েছেন। চিরকাল তিনি নেতাজীর জীবনব্রতয় অধিষ্ঠান করেছেন। তাঁকে দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়েছিল মুক্তির পর।

সেখানেও অত্যাচরিত হয়েছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন নীরা। মুক্তির পর সাদামাটা জীবন কাটিয়েছিলেন। এমনকী শেষ জীবনে ফুল বিক্রি করে অন্নের জোগাড় করেছেন। সরকারি সাহায্য গ্রহণ করেননি।

নীরা আর্য ইতিহাসের পাতায় কোথাও নেই। তাঁর লড়াই ইতিহাসের কোনও কোণে স্থান পায়নি। তবুও তাঁর লড়াই-এর কাহিনী স্বাধীন  ভারতের আকাশে-বাতাসে নীরবে জেগে রয়েছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...