গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে গুপ্তচরবৃত্তিকে বিভিন্ন ভাগে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। সাধারণ অর্থে চিন্তা করতে গেলে গুপ্তচরেদের প্রধান কাজ ছিল রাজা বা রাজাস্থানীয় অর্থাৎ স্বামী বা প্রভুকে সেই সকল গুপ্তসংবাদ দেওয়া যার ফলে রাজ্যে সুশাসন ও মঙ্গলময় অবস্থা বজায় থাকে। কিন্তু ইতিহাসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে ব্যাপারটা এতটাও সহজ-সরল নয়।
তার কারণ, গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে যেমন কাজের শ্রেণীবিভাগ থাকে তেমনি তাদের কাজের ধরণ অর্থাৎ কেমন ধরনের গুপ্ত সংবাদ একজন গুপ্তচর সংগ্রহ করবে তারও শ্রেণীবিভাগ থাকে।
এই সকল গুপ্তচরদের একত্রে সংস্থা বলা হত। অর্থাৎ একটি সংস্থার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুপ্তচর থাকত। এই সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সাধারণত থাকে রাজা বা রাজার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মন্ত্রীর ওপর। সংস্থার মধ্যে যে ধরনের গুপ্তচরেরা থাকে তাদের সব ক্ষেত্রে রাজা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতেন না। রাজার অমাত্য বা ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীরাই অনেক ক্ষেত্রে এইসব নিয়ন্ত্রণ করতেন।
তেমনই এক বিশেষ ধরনের গুপ্তচর হল ‘কাপটিক’। আক্ষরিক অর্থে চিন্তাভাবনা করতে গেলে কাপটিক শব্দটির অর্থ কুপরামর্শদাতা বা যারা কোন একটি ক্ষেত্রে গুপ্তসংবাদ পৌঁছে দিয়ে বিভিন্ন ছলনার মাধ্যমে রাজ্য চালাতে সাহায্য করেন।
তবে অর্থশাস্ত্রমতে রাজা বা প্রধান অমাত্যর প্রতি অনুগত নির্দিষ্ট কোন আচার্যের অধীনস্থ ছাত্রবৃত্তি ধারণকারী মূলত কপটতার আশ্রয় নিয়ে অপরের গোপনীয়তা অনুসন্ধানে পারদর্শী নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানপূর্বক গুপ্তচরের কার্যে নিযুক্ত গুপ্তচররা কাপটিক নামে পরিচিত।
কাপটিক শব্দটির সঙ্গে কপটতা অর্থাৎ ছলনার যোগ রয়েছে। গুপ্তচরদের নিয়োগ করার ক্ষেত্রে যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি সেই গুপ্তচরের মধ্যে আছে কিনা লক্ষ্য করা হত তা হল-এরা প্রয়োজনে কতটা ছলনা বা কপটতার আশ্রয় নিতে পারে, এরা এই ছলনার আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের বিষয়ে কতটা সাবধানী হতে পারে এবং সেই ছলনার আশ্রয় নিয়ে গোপন সংবাদ রাজার কাছে কতটা সহজে এরা পৌঁছে দিতে পারে।
এই ধরনের গুপ্তচর নিয়োগ করার সঙ্গে-সঙ্গেই তাদেরকে কোন কাজ দেওয়া হত না। সাধারণত রাজার কোন মন্ত্রী বা অমাত্যর প্রতি তাদের আনুগত্য বিচার করে দেখা হতো। সেই আনুগত্য বিচারে তারা সফল হলে তখনই তাদের কোন গুপ্তকাজ দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করা হত।
তবে আনুগত্য বিচারে ক্ষেত্রে এই নিযুক্ত গুপ্তচররা সফল হলে তারপর তাদের কাজ শেখানো হতো। সঠিক প্রশিক্ষণের পরই এই ধরনের গুপ্তচররা নিজেদের কাজ পেতেন। যেহেতু কেবলমাত্র ছলনার আশ্রয় নিয়ে তাদের মূল কাজ সারতে হতো তাই একথা বলা যায় যে এই ধরনের গুপ্তচররা মূলত তাদের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে নিজেদের কর্ম-সাধন করতেন।
তবে সমস্ত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কাপটিক গুপ্তচরের সংখ্যা নেহাত কম নয়, এটাও ঠিক গুপ্তচরদের প্রয়োজনে কিন্তু অস্ত্র ধরতে হয়েছে। তাই রাজার নির্দেশে নির্দিষ্ট আচার্যের কাছে অস্ত্র এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়েছে কাপটিকদের। ইতিহাসে এই ধরনের গুপ্তচরেরা যেমন সমাদৃত হয়েছেন তেমনি প্রয়োজনে নিন্দিতও হয়েছেন।