ব্যবসা-বাণিজ্যে ভরাডুবি হলে ‘ব্যর্থ বণিক’ হয়ে উঠতে পারতেন ক্ষুরধার ‘রাজ গুপ্তচর’

চাণক্য বা কৌটিল্যর ‌অর্থশাস্ত্রে গুপ্তচরদের বিভিন্ন প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গুপ্তচর নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজা ছাড়াও ভূমিকা থাকে রাজার অমাত্যদের। অর্থশাস্ত্র মতে রাজা গুপ্তচর নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো উপদেশ বা আদেশ দিলেও রাজার মন্ত্রী এবং অমাত্যরাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন।

অর্থশাস্ত্রে বর্ণিত রয়েছে যে একবার এক ব্যবসায়ীর বিরাট ক্ষতি হয়েছিল এক বাণিজ্য যাত্রায়। আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত ছিলেন সেই ব্যবসায়ী। তবে সেই ব্যবসায়ী যথেষ্ট জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন মানুষ ছিলেন।

রাজার কাছে তিনি সমাধান চাইতে এসেছিলেন তাঁর আর্থিক দুরবস্থার। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য রাজার থেকে মূলত আর্থিক সাহায্য চাইতে এসেছিলেন তিনি। রাজা তখন তাঁকে অন্য পন্থার কথা বলেন। তিনি সেই ব্যবসায়ীকে রাজ্যের গুপ্তচর হওয়ার পরামর্শ দেন। তবে তার বদলে শর্ত দেন যে ওই ব্যবসায়ী চাইলেও আর কখনো বাণিজ্য করতে পারবেন না। তাঁর মূল কাজ হবে রাজ্যের জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করা।

এই সময়ে স্বয়ং রাজা বিরোধিতার সম্মুখীন হন। গুপ্তচর নিয়োগের জন্য সাধারণত রাজা একটি দল গঠন করতেন মন্ত্রিসভার অমাত্যদের নিয়ে। যার নাম সংস্থা। সেই অমাত্যদের মধ্যে কেউই কোন ব্যবসায়ীকে গুপ্তচর হিসেবে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। তারপর ঠিক হয় যে কোন ব্যবসায়ী যদি নিজের প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান প্রমাণ করতে পারেন তখনই তাঁকে গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে। এই ধরনের গুপ্তচরদের নাম দেওয়া হয় বৈদেহক-ব্যঞ্জন।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রমতে নিজের বৃত্তি বা কাজ অর্থাৎ বাণিজ্যকর্মে কোন হানির দ্বারা বা কোন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অথচ প্রজ্ঞাসম্পন্ন এবং জ্ঞানী কোন বণিক যদি রাষ্ট্রের দেওয়া কোন নির্দিষ্ট ভূমিতে অবস্থান করার মাধ্যমে দলগতভাবে কার্যসিদ্ধি করে গুপ্তচরের কাজে নিজেকে প্রমাণ করেন তখন এই ধরনের গুপ্তচরদের বৈদেহক-ব্যঞ্জন নামে অভিহিত করা হয়।

কৃষিকর্মের ক্ষেত্র থেকে কেউ গুপ্তচর হলে যেভাবে দলগত ভাবে তাদের অবস্থান করতে হতো এই একইভাবে ব্যবসায়ীরাও গুপ্তচর হলে তাদের রাজার দেওয়া নির্দিষ্ট জমিতে একসঙ্গে থাকতে হতো। গুপ্তচরদের ক্ষেত্রে সাধারণত একা একটি অঞ্চলে অবস্থানের অনুমতি দিতেন না রাজারা। বিশেষ করে যাঁরা অন্য কোন কর্মক্ষেত্র থেকে গুপ্তচরবৃত্তিতে যোগদান করেছেন।

এই ব্যবসায়ীরা যখন প্রথম গুপ্তচর হিসেবে নিয়োজিত হতে থাকেন প্রথম দিকে সংস্থার অন্যান্য সদস্যরা এদের গুপ্তচর হিসেবে মানতে রাজি হতেন না। অর্থশাস্ত্রে রয়েছে যে, নিজেদের কর্মদক্ষতা প্রমাণ না করতে পারলে এদেরকে কোন কাজে পাঠানো হত না। তাই শুরুর দিকে রাজ্যে এঁদের গ্রহণযোগ্যতা সেভাবে ছিল না।

তারপর ধীরে ধীরে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন এবং ইতিহাসে এই ধরনের গুপ্তচর নানা গুরুত্বপূর্ণ কার্য সাফল্যের সঙ্গে সমাধা করেছেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...