মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের প্রথম অভিনয় হয়েছিল এই ভিলায়

এই ভিলার বাগানবাড়িতে ছিল মতিঝিল নামে একটি সুন্দর খাল ছিল। লাল পদ্ম, নীল পদ্ম ফুটে থাকত সেই সময়। অষ্টাদশ শতাব্দীর একটা সম্ভ্রান্ত বাড়ি হিসেবে প্রচলিত ছিল এই বেলগাছিয়া ভিলা। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এটি বাগানবাড়ি হিসেবে নির্মাণ করিয়েছিলেন। সেই সময় সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রগুলিতে বেলগাছিয়া ভিলার একাধিক পার্টি এবং অনুষ্ঠানের বর্ণনা পাওয়া গেছে। ইউরোপীয় আসবাব চিত্র ও ভাস্কর্যে সাজানো ছিল এই ভিলার বৈঠকখানা। এই বৈঠকখানার পিছনের দিকেই ছিল মার্বেল পাথরের ফোয়ারা। মতিঝিলের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছিল একটি কৃত্রিম দ্বীপ। এই দ্বীপে গরমকালে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। ইংরেজরা একে ‘সামার হাউস’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এই গ্রীষ্মাবাসে যাওয়ার জন্য কাঠ ও লোহার দুটি সেতু তৈরি করা হয়েছিল। বাগানে ছিল ফুলের মেলা।

১৮৫৬ সালে বেলগাছিয়া ভিলা বিক্রি হয়ে যায়। শ্রীযুক্ত রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ বাহাদুর এবং শ্রীযুক্ত রাজা ঈশ্বর চন্দ্র সিংহ বাহাদুর ৫৪ হাজার মুদ্রায় সেটি কিনেছিলেন। বেলগাছিয়া ভিলা আসলে নিলামে বিক্রি হয়েছিল। একজন সাহেব ৫৩ হাজার টাকা দাম দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৫৪ হাজার টাকায় বাগানবাড়িটি কিনে নিয়েছিলেন সিংহরা। মুর্শিদাবাদ জেলার কাঁদি ও কলকাতার পাইক পাড়ার বনেদি ও বিখ্যাত পরিবার এই সিংহরা। পরবর্তীকালে বেলগাছিয়া ভিলার নানা পরিবর্তন করেছিলেন এই সিংহরা। বাড়িতে কয়েকটি আউট হাউস রয়েছে। প্রধান বাড়ি দুটি। আগে এই বাড়ি দোতলা ছিল না। ঠাকুর ও সিংহরা নিজেদের মনের মতো করে বাড়িটি আবার গড়ে নেন। সুরকি ও টালি দিয়ে ছাদ তৈরি করা হয়েছিল।

বর্তমানে ভিলা প্রাঙ্গণে ঢুকে প্রথমেই যে বাড়িটি চোখে পড়ে তার দরজায় কুলুপ আটা রয়েছে। উত্তরমুখী বাড়িটির সামনের মাঝখানের অংশ অর্ধবৃত্তাকার। দুপাশটা চাপা। সামনে কয়েকটা সিঁড়ি ভেঙে চাতালে উঠে তারপর বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে হয়। উত্তর ও দক্ষিণ দুদিকেই রয়েছে বারান্দা। এই বাড়ির গাড়ি বারান্দা পেরিয়ে দ্বিতীয় বাড়িটিতে আসতে হয়। জগদীশ চন্দ্র সিংহ তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূকে নিয়ে এই বাড়িতে ছিলেন। তাঁর পুত্রবধূ ছিলেন শুটার।

সিংহ পরিবারের খ্যাতি গঙ্গা গোবিন্দ সিংহের আমল থেকে। জগদীশচন্দ্র সিংহ তাঁর অষ্টম প্রজন্ম। সাবেক ইতালিয়ান ভিলার সঙ্গে বেলগাছিয়া ভিলার মিল বিশেষ নেই। তবে এই ভিলা বাড়ি হিসেবে খোলামেলা। বর্তমানে এই ভিলা ঠিকানা ৬৪ নম্বর বি বেলগাছিয়া রোড। ৩০০ বিঘে বা ১৫ একর জমি এখন না থাকলেও যেটুকু আছে তা যথেষ্ট ঐতিহ্যের পরিচয় দেয়। নিস্তব্ধ ভিলার চারিদিকে আজও সেই সময়ের গুঞ্জন শুনতে পাওয়া যায়।

ইতিহাসে স্থান করে নেওয়ার অন্যতম কারণ এই ভিলাতেই প্রথমবার অভিনীত হয়েছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের শর্মিষ্ঠা নাটক। মার্বেল পাথরের সাদা কালো টালি বসানো মেঝেতে আজও শুনতে পাওয়া যায় অ্যালসেশিয়ানের নখের শব্দ। একসময় চার চারটি প্রমাণ সাইজের অ্যালসেশিয়ান থাকত এখানে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...