বহুরূপী নাট্যদলের অন্যতম অভিভাবক ছিলেন কুমার রায়। থিয়েটারের আর পাঁচটা অভিভাবকের থেকে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর স্বভাব, রুচিবোধ, শৃঙ্খলা তাঁকে আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা করে দিত। তাঁর সম্পূর্ণ নাম ছিল কুমারেন্দ্রনারায়ণ রায়। তাঁর পিতার নাম দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ রায়। কুমার রায়ের জন্ম বাংলাদেশের দিনাজপুর অঞ্চলে। নানা পেশায় যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের অধ্যাপক রূপে নিযুক্ত হন। তাঁর দেশের বাড়ি দিনাজপুরে গান, নাচ ছবি আঁকার চর্চা ছিল ছোটবেলা থেকে। তাঁদের চর্চার মূল বিষয় ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই শৈশব থেকে তিনি মানুষ হয়েছেন এক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল বেষ্টিত হয়ে। রবীন্দ্রনাথ তাঁদের চর্চার মূল বিষয় হওয়ার কারনে রবীন্দ্রনাথের ব্যঙ্গকৌতুক, হাস্যকৌতুক ঘরানার বেশ কয়েকটি নাটক তিনি করেছেন আবার পাশাপাশি রাজশাহি কলেজে ঋত্বিক ঘটক ও অন্যান্য সহপাঠীদের নিয়ে রাজা ও পরিত্রান নাটক ও করেছেন। দিনাজপুরে থাকাকালীন বহু নাটক দেখতেন। সেই নাটক গুলি হল টিপু সুলতান, বন্ধু, নতুন প্রভাত, দুই পুরুষ প্রভৃতি।
বিয়াল্লিশের আন্দোলনের সময় তিনি গ্রেফতার হন। জেলে বসেই তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। পরবর্তীকালে তিনি পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় চলে আসেন এবং ঋত্বিক ঘটকের সহায়তায় বহুরূপীতে যোগদান করেন। তাঁর পারিবারিক পরিবেশ এবং নিজের আত্মিক অনুভূতি তাঁকে থিয়েটারের দিকে টেনে নিয়ে এসেছিল। বহুরূপীর প্রথম নাট্যোৎসব হয় ডিসেম্বরে। তিনি তখন কর্মসূত্রে বরাকরে, সেখান থেকে নাটকের টানে রাতে ট্রেনে করে সকালে কলকাতায় আসতেন। আবার দুপুরের ট্রেনে ফিরে যেতেন। বহুরূপীর প্রথম পর্ব থেকে তিনি এই নাট্যদলের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। দলটির নির্দেশকের পাশাপাশি বহুরূপীর পত্রিকার সম্পাদক ও ছিলেন। তিনি এই নাট্য দলে অভিনয়ও করতেন। কুমার রায়ের মঞ্চে অভিনীত কয়েকটি উল্লেক্ষযোগ্য চরিত্র হল রক্তকরবীতে গোঁসাই, বিসর্জনে গোবিন্দমাণিক্য, রাজা নাটকে দুর্গাদা, পাগলা ঘোড়ায় শশী, মুক্তধারায় বটু। তাঁর নির্দেশিত বহুরূপীতে নাটক গুলি হল রাজদর্শন, আগুনের পাখি, মালিনী প্রভৃতি। চলচ্চিত্রেও তিনি কাজ করেন। তিনি বহু পুরস্কারে পুরষ্কৃত হন। নাট্য আকাদেমি পুরস্কার, দীনবন্ধু পুরস্কার প্রভৃতি।