বিধানচরিত, এক মহামানবের জীবনকথা

ঠাকুমা নাম তাঁর রেখেছিলেন ভজন, তিনিই ত্রিরিশের দশকে হয়েছিলেন কলকাতার ষষ্ঠ মহানাগরিক। পটনার সেই মেধাবী ছেলে কলকাতায় আসল উচ্চশিক্ষার জন্য, ভবিতব্য তাঁকে বানিয়ে দিল ডাক্তার! যদিও ডাক্তারি পড়ার বিশেষ কোন বাসনাই ছিল না তাঁর, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ফর্মের জন্য একই সঙ্গে আবেদন করেছিলেন। ডাক্তারির ফর্মটা আগে চলে আসায় ফর্ম পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। 
 
সেই সময়ে থাকতেন কলেজ স্ট্রিট ওয়াই এম সি এ-তে, ভয়ঙ্কর অর্থাভাব, মাস্টারমশাইরা অবসর সময়ে এই বিখ্যাত ছাত্রটিকে ধনী রোগীদের বাড়িতে মেল নার্স হিসেবে পাঠাতেন। রোগীর বাড়িতে বারো ঘণ্টার ডিউটির পর পারিশ্রমিক পেতেন আট টাকা। রোগী দেখার পসার জমে ওঠার আগে প্রথম দিকে কলকাতায় পার্ট টাইম ট্যাক্সি ড্রাইভার ছিলেন এই ডাক্তার। চালক ও পরবর্তীতে মালিক হিসেবে মোটর গাড়ির সম্বন্ধে তাঁর  আগ্রহ ছিল প্রবল।
 
তাঁর চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিতে জীবন্ত কিংবদন্তি পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি; সেই তিনিই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এমবি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। আবার তিনিই মাত্র ১২০০ টাকা সম্বল করে বিলেত গিয়ে দু'বছরে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত ডিগ্রি এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস প্রায় একই সঙ্গে অর্জন করে এনেছিলেন, তাঁর ক্লিনিক্যাল আই ছিলো অনবদ্য! রোগলক্ষণ বুঝতেন অব্যর্থ। তিনিই হলেন পশ্চিমবাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়।
 
বিধানচন্দ্র রায়ের ঠাকুরদা প্রাণকালী রায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর কালেক্টরেটের একজন কর্মচারী ছিলেন৷ বিধানচন্দ্র রায়ের পিতা প্রকাশচন্দ্র রায়ের জন্ম হয় বহরমপুরে ১৮৪৭সালে ৷ ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের মাতা অঘোর কামিনী দেবী ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরেরই এক জমিদার বিপিনচন্দ্র বসুর কন্যা৷ ১৮৮২ সালের ১লা জুলাই বর্তমানে বিহারের অন্তর্গত পাটনার বাঁকিপুরে ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম হয়েছিল। তিনি ছিলেন পিতা প্রকাশচন্দ্র রায় ও মা অঘোরকামিনী দেবীর ছয় সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। পেশাগতভাবে সরকারি চাকুরিজীবী প্রকাশচন্দ্র রায় ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন।
 
বিধানচন্দ্র রায়ের প্রাথমিক পড়ারশুনা শুরু হয়েছিল গ্রামের এক অতিসাধারণ পাঠশালায়। তারপর পাটনার টি কে ঘোষ ইনস্টিটিউশন এবং পরবর্তীতে পাটনা কলেজিয়েট স্কুলে বিদ্যালয় স্তরের পঠনপাঠন সম্পূর্ণ করেন। ১৮৯৭ সালে তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়, তিনি তার পিতামাতার সব সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ ছিলেন। বিধানচন্দ্র রায়ের বয়স তখন ১৪ বছর বয়স এবং তাঁর বাবা এক্সাইজ ইন্সপেক্টর হিসাবে কাজ করতেন। সেই জন্যে বাইরে থাকতে হত, তাই সব ভাইবোনদেরকে পরিবারের সমস্ত কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হয়েছিল। খুব অল্প বয়স থেকেই বিধানচন্দ্র রায় ঘরোয়া কাজ করতে পারদর্শী ছিলেন। এর এক বছর পর প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি পাটনা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। তিনি ১৯০১ সালে পাটনা কলেজ থেকে গণিতে সাম্মানিকসহ স্নাতক হয়ে, তিনি কলকাতায় চলে আসেন। বিধানচন্দ্র রায় ১৯০১ সালের জুন মাসে পড়াশোনার জন্য পাটনা ত্যাগ করেন।
 
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এল.এম.এস এবং দু-বছর পরে মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং  লন্ডনের বার্থোলোমিউ হাসপাতালে উচ্চশিক্ষার আবেদন করেন। প্রথমে এশীয় হওয়ার কারণে তাঁর আবেদন গৃহীত হয় না । জনশ্রুতি রয়েছে  বিধানচন্দ্র রায় একবার দুবার নয় ,প্রায় ত্রিশবার আবেদন করার পরে সাফল্য পেয়েছিলেন। অথচ এই ঘটনার পর কেবল দু-বছর তিন মাস সময়ের মধ্যেই তিনি একসঙ্গে এম.আর.সি.পি. (লন্ডন)এবং এফ.আর.সি.এস. (ইংল্যান্ড) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি ১৯১১ সালে কলকাতায় ফিরে প্রথমে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও পরে ক্যাম্পবেল অর্থাৎ আরজি কর এবং কারমাইকেল অর্থাৎ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতা করেছিলন। এছাড়া তিনি কলকাতার চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল, ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশন এবং কমলা নেহরু হাসপাতালের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। 
 
১৯১১ সালে বিধান রায় যখন  বিলেত থেকে  কলকাতায় ফিরলেন তাঁর কাছে মাত্র পাঁচ টাকা। বিলেত যাবার আগে কলকাতায় তাঁর দর্শনী ছিল দু'টাকা। প্রথমে তাঁর ঠিকানা ছিলো ৬৭/১ হ্যারিসন রোড, পরে দিলখুশ কেবিনের কাছে, ৮৪ হ্যারিসন রোড। সেখানেই ১৯১৬ সাল পর্যন্ত তিনি থাকতেন, এর পর চলে আসেন ওয়েলিংটন স্ট্রিটের বাড়িতে। জনশ্রুতি অনুযায়ী , উপার্জন বৃদ্ধির জন্যে তিনি বাড়িতে রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য প্যাথোলজি স্থাপন করেন।
 
ডাক্তারি পেশায় বিপুল সাফল্য বিধানচন্দ্রকে বিশেষ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। মাত্র সাড়ে আট বছরের প্র্যাকটিসে তদানীন্তন কলকাতায় প্রাসাদসম বাড়ি এবং গাড়ির মালিক হওয়া সহজ ব্যাপার ছিল না। তাঁর রোগীর তালিকায় সেই সময়ের কোন বিখ্যাত মানুষটি ছিল না ! স্টার ডাক্তারের সব সুপার স্টার রোগী, এর মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও আছেন। শোনা যায়, পরিচয় পর্বের প্রথম দিকে তিনি জোড়াসাঁকোর জন্যও ভিজিট নিতেন, যদিও পরবর্তী সময়ে দু'জনে খুবই কাছাকাছি আসেন, এবং বয়সের পার্থক্য থাকলেও রীতিমতো বন্ধুই হয়ে গিয়েছিলেন। মতিলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, কমলা নেহরু, বল্লভভাই পটেল, ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে সেই সময়েই এমন কোনো বিখ্যাত মানুষ ছিলেন না যে তাঁর  থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ নিতেন না ! এমনকি নীল রতন সরকারেরও মৃতুশয্যায় চিকিৎসকের ভূমিকা তিনিই সামলেছিলেন।
 
১৯১৩-১৯৪৮ এই সময় পর্বে অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশে থাকার সময় কালে গান্ধীজি মোট আঠারোবার অনশন করেছিলেন এবং অধিকাংশ সময়েই বিধানচন্দ্র তাঁর শয্যাপার্শ্বে উপস্থিত ছিলেন। দেশবন্ধুর সাথে তাঁর আত্মীয়ের মতো সম্পর্ক ছিলো, তিনি ছিলেন বিধানরায়ের রাজনৈতিক গুরু। ডা. বিধানচন্দ্র রায় ১৯২৩ সালে দেশবন্ধুর কাছে রাজনৈতিক দীক্ষা লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। মহাত্মা গান্ধির ডাকে কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯৩১ সালে কারাবরণ করেন। 
 
প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের পর বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিধানচন্দ্র রায় লাল বাড়ির দায়িত্ব নিয়েছিলেন নেতাজির জন্মদিনের দিন অর্থাৎ ২৩শে জানুয়ারি সালটা ছিল ১৯৪৮। যখন বিধান রায় মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন, তার আগের মাসে তাঁর ডাক্তারি থেকে উপার্জন ছিল ৪২০০০ টাকা, অথচ তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নিজেই নিজের বেতন ঠিক করলেন মাত্র ১৪০০ টাকা, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৬৫ বছর। মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পর কাছের লোকেদের বলেছিলেন," বয়স দশটা বছর কম হলে ভাল হত।" তার উপর ছিল তাঁর চোখের সমস্যা, ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করতেন এবং আয়তনে খুব দীর্ঘ কিছু পাঠ করার বিষয় হলে তিনি এড়িয়ে চলতেন। 
 
বাংলা সিনেমার এক বিরাট উপকার তিনি করেছিলেন, চলচ্চিত্রকে তিনি মানিক দিয়েছিলেন। বান্ধবী বেলা সেনের কথায়, সত্যজিৎ রায়ের অসমাপ্ত ছবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত 'পথের পাঁচালী' তিনি দেখেন এবং সরকারি সাহায্যে তিনি এই ছবিটির সরকারি প্রযোজনার ব্যবস্থা করেন, শোনা পথ শব্দটি থাকায় তিনি পূর্ত দপ্তরের রাস্তা নির্মাণ খাতেক টাকা বরাদ্দ করে হয়েছিল। তারপর তো বাকিটা ইতিহাস! কবিগুরুর জন্মশতবার্ষিকীতে রবীন্দ্র রচনাবলি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনিই।
 
১৯৪৮ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইতিহাসের অন্যতম কঠিনতম সময়ে বিধানচন্দ্র রায় লালবাড়ির রাজত্ব সামলেছিলেন প্রায় সাড়ে চোদ্দো বছর। তাঁর সেক্রেটারি সরোজ চক্রবর্তী বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথম দু'বছর তিনি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি নিজের জমি বিক্রি করেছিলেনলেন, শেয়ার বিক্রি করলেন, এমনকী শৈলশহর শিলঙের প্রিয় বাড়িটাও বিক্রি করলেন। 
 
মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নিজের বাড়িতে বিনা খরচে নিয়মিত রোগী দেখতেন তিনি প্রতিদিন সকাল সাতটায় সে ব্যাবস্থাও করেছিলেন এবং সেই জন্য দু'জন ডাক্তারকে নিজের খরচে নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত স্টাফের তিনি মাইনে দিতেন নিজের ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে।
কোন কিছুতেই তাঁর আসক্তি ছিল না! তাঁর প্রথম জীবনীকার কে পি টমাস বলেছেন, তিনি ধূমপান বা মদ্যপান কোনওটাই করতেন না।
 
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ষাটোর্দ্ধ বিধানচন্দ্র রায় অমানুষিক পরিশ্রম করে গিয়েছেন। তিনি বহু জমি উদ্ধার করেছিলেন উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানের জন্যে এবং কিছু ধানের জমিতে পাটচাষের ব্যবস্থা করে লক্ষাধিক চটকলকর্মীদের সম্ভাব্য বেকারত্ব কার্যত রুখে দিয়েছিলেন। শিল্পসমৃদ্ধ বাংলা গড়তে তাঁর নিরলস পরিশ্রম এবং  ত্রুটিহীন পরিকল্পনায় স্থাপিত হল দুর্গাপুর ইস্পাতনগরী, চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা, স্পিনিং মিল। বাসস্থানের জন্য তৈরি হল কল্যাণী উপনগরী, বিধাননগর, লবণহ্রদ নগর। দুগ্ধ সরবরাহের জন্যে গড়ে তুললেন হরিণঘাটা দুগ্ধ প্রকল্প। শিক্ষিত বেকারদের বিপুল পরিমাণে কর্মনিয়োগের জন্য সৃষ্টি করলেন কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা। তিনি ১৯৪৩-৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিলো রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ, পুরুলিয়া, রহড়া এবং নরেন্দ্রপুরে প্রাচীন ভারতীয় আদর্শে আশ্রমিক পরিবেশের ভাবনা ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ রামকৃষ্ণ আশ্ৰমিক বিদ্যালয়।
 
প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় উঠে তিনি গীতা ও ব্রহ্মস্তোত্র পড়ে, স্নান সেরে, সাড়ে ৬টায় ব্রেকফাস্ট খেয়ে, দুঘণ্টা ধরে বিনামূল্যে ১৬ জন রোগী দেখে সবার আগে রাইটার্স-এ আসতেন। ব্রেকফাস্টে থাকত একটি টোস্ট, একটি ডিম, বেলপানা অথবা পেঁপে ও এক কাপ কফি। 
রাইটার্সে সকাল ন'টা থেকে দশটা জরুরি ফাইল দেখতেন। তারপর সচিবদের সঙ্গেচলতো আলাপ আলোচনা। দর্শনার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলত দুপুর বারোটা থেকে সাড়ে বারোটা, তারপর মধ্যাহ্নভোজন ও বিশ্রাম। পরবর্তী সময়ে অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ি চলে এসে খাওয়াদাওয়া করে সামান্য বিশ্রামের পরে আবার চলে যেতেন রাইটার্সে এবং সেখানে থাকতেন রাত ৮টা পর্যন্ত। 
 
এবার তাঁর নিজের কথা বলি, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কিছু পরেই একবার তাঁর জ্বর হয়েছিল। তাঁর ক্যাবিনেটে সতীর্থ অর্থমন্ত্রী নলিনীরঞ্জন সরকার জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনার অসুখ হলে কে আপনার চিকিৎসা করে?"তিনি নিজের ভঙ্গিতেই বলেছিলেন "বিধান রায় করে। আমি আয়নার দিকে তাকাই আর অমনি সেই প্রতিচ্ছবিতে থাকা বি সি রায় আমার চিকিৎসা করে।" সর্দিকাশি ইত্যাদি ছোট ছোট রোগে সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি নিত্য ভুগতেন। তাঁর প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল ১৯৩০ সালে, তখন তিনি কংগ্রেসের কাজে আমদাবাদ থেকে দিল্লির পথে। দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রি থাকাকালীন। সেবারেও সামলে নিয়েছিলেন, শুধু দৈনিক রুটিনের একটু পরিবর্তন করেছিলেন মাত্র! দুপুরে ওয়েলিংটন স্ট্রিটের বাড়িতে খেতে আসতেন এবং বাড়িতেই ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম করে আবার রাইটার্সে যেতেন।
 
২৪ শে জুন ১৯৬২, রাইটার্সে ওইটাই ছিল তাঁর শেষ দিন। নিমপীঠের এক সন্ন্যাসীকে বলেছিলেন, "শরীর যেমন ঠেকছে কাল নাও আসতে পারি।' তখন মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়েগিয়েছে তাঁর, পরের দিন বাড়িতে ডাক্তার শৈলেন সেন ও যোগেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডাকা হল। তাঁদের ধারণা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ৩০শে জুন তাঁর প্রিয় বন্ধু ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে তিনি বললেন, ''আমি তিরিশ বছর যাবৎ হৃদরোগের চিকিৎসা করে আসছি, আমার কতটা কী হয়েছে আমি তা ভাল করেই বুঝতে পারছি। কোন ওষুধই আমাকে ভাল করতে পারবে না।"
 
১লা জুলাই ছিল তাঁর জন্মদিন। সেদিনই তাঁর মৃত্যু দিন ! 
 
ওই দিনই তাঁর আত্মীয়স্বজনরা এসেছিলেন। পরিচারক কৃত্তিবাসের হাত থেকে এক গ্লাস মুসুম্বির রস খেলেন তিনি। তারপর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে বললেন, "আমি দীর্ঘ জীবন বেঁচেছি। জীবনের সব কাজ আমি সমাধা করেছি। আমার আর কিছু করার নেই।" আরো বললেন, "আমার পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।" এরপরেই নাকে নল পরানো, ইঞ্জেকশন এবং বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে তিনি প্রয়াত হলেন।
মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে কেওড়াতলা শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির সূচনা করতে এসে বিধানচন্দ্র বলেছিলেন, "ওহে আমাকে এই ইলেকট্রিক চুল্লিতে পোড়াবে।" তাঁর শেষ ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে ২রা জুলাই ১৯৬২ সালে কেওড়াতলাতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন  হয়েছিল। তাঁর জন্ম এবং মৃত্যু দিনটি চিকিৎসক দিবস হিসেবে প্রতি বছর সারা দেশ জুড়ে উদযাপিত হয়।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...