দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছিলেন বাংলা নাট্যজগৎ-এর আর এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার ও সংগীত স্রষ্টা। তিনি ডি.এল রায় নামেই পরিচিত ছিলেন। ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন সুকণ্ঠ গায়ক কার্তিকেয়চন্দ্র রায় এবং মাতা প্রসন্নময়ী দেবী। হুগলী কলেজ থেকে বি এ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। এরপর কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য তিনি লন্ডনে যান। এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে এসে বহু চাকরিতে নিযুক্ত হন। বিদেশে থাকা কালীন তিনি পাশ্চাত্য নাট্যসাহিত্য ও নাট্যাভিনয়ের সঙ্গে বিশেষ ভাবে পরিচিত হন। ১৯০৫ সালে তিনি সাহিত্য সংগঠন নামক একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনটি ছিল তখনকার সংস্কৃত ও শিক্ষিত বাঙালিদের তীর্থস্থান। এই একই সময়ে তিনি ইভনিং ক্লাব নামে অপর একটি সংগঠনের সাথেও যুক্ত হন। এবং এর মাধ্যমেই তিনি প্রথম অভিনয়ে অংশগ্রহন করেন। বিলেতে থাকাকালীন তিনি সেখানকার অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয় কৌশল রঙ্গলায়ের ব্যবস্থা কাছ থেকে দেখেছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক গুলিকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয় প্রহসনধর্মী, ঐতিহাসিক, সামাজিক, পৌরাণিক। তার প্রহসনধর্মী নাটকগুলি হল একঘরে, কল্কি অবতার, বিরহ, এহ স্পর্শ, সুখী পরিবার, প্রায়শ্চিত্ত, পুনর্জন্ম, আনন্দ বিদায়। তার ঐতিহাসিক নাটক গুলি হল তারাবাই, প্রতাপসিংহ, দুর্গাদাস, সোরাব রুস্তম, নুরজাহান, মেবার পতন, শাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল বিজয়। পৌরাণিক নাটক সীতা, ভীষ্ম, পাষাণী। সামাজিক নাটক গুলি হল পরপারে, বঙ্গনারী প্রভৃতি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কে বলা হত হাসির গানের রাজা। তাঁর মধ্যে হাস্যকৌতুক, সামাজিক ব্যঙ্গ এবং ধিক্কার মিলেমিশে একটি রূপের সৃষ্টি হয়েছিল আর সেখান থেকেই থেকে তিনি প্রহসন লেখার প্রেরণা পেলেন। তাঁর আনন্দ বিদায় লেখাটি রবীন্দ্রনাথ কে আক্রমন করে লেখা। তাঁর নাটকগুলিতে শেকসপিয়ারের রীতির অনুসরণ দেখতে পাওয়া যায়। বাংলা নাট্যসাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান অতুলনীয়।