চলে গেলেন রডনি মার্শ

প্রয়াত অজি কিংবদন্তি উইকেটকিপার রডনি মার্শ। ৭৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাক্তন উইকেটকিপার। রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী রস এবং তিন সন্তানকে পল, ড্যান ও জেমিকে।মার্শের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গত সপ্তাহ থেকে আমাদের পরিবার যে পরিমাণ ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছে সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সপ্তাহে এই সমর্থন আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।’ গত সপ্তাহে ২৪ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল কুইন্সল্যান্ডের এক হাসপাতালে।

কুইন্সল্যান্ডের বুন্দাবার্গে এক চ্যারিটি ইভেন্টে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন মার্শ। তৎক্ষণাৎ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মার্শের সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন ওই চ্যারিটি ইভেন্টের ২ কর্মী। প্রাক্তন অজি উইকেটরক্ষকের অবস্থা খারাপ হতে দেখেই তাঁরাই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এর পর তিনি সংকটজনক অবস্থায় থাকলেও, পরিবারের কাছাকাছি থাকার জন্য তাঁকে অ্যাডিলেডের হাসপাতালে স্থানান্তিরত করা হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন মার্শ।

টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ উইকেটকিপার এবং একজন দুরন্ত বাঁ-হাতি ব্যাটার মার্শ। তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৭০-১৯৮৪ সালের মধ্যে ৯৬টি টেস্টে খেলেছেন। এবং অবসর নেওয়ার সময় তাঁর নামের পাশে ছিল ৩৫৫টি উইকেট শিকারের নজির (ক্যাচ ও স্টাম্প মিলিয়ে)। যা সেই সময়ে একটি বিশ্ব রেকর্ড ছিল। এবং তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরি ও ১৬টা হাফসেঞ্চুরি রয়েছে মার্শের নামের পাশে। টেস্ট ক্রিকেটে রডনি মার্শ করেছিলেন মোট ৩৬৩৩ রান। এবং ৯২টি এক দিনের ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ১২২৫ রান।

কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলির সঙ্গে তাঁর জুটি টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বোলার-উইকেটকিপার জুটি। যেখানে ‘ক্যাচ মার্শ, বোল্ড লিলি’ রেকর্ড রয়েছে ৯৫ বার। ১৯৮৪ সালে একসঙ্গে তাঁরা অবসর নেওয়ার পরে, তাঁদের রেকর্ড আজও অক্ষত আছে। ১৯৮৪ সালে সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টটি ছিল লিলি ও মার্শের ক্যারিয়ারেও শেষ টেস্ট। এই ম্যাচ দিয়ে দুজন টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানার আগে দারুণ এক মিল রেখে যান। মার্শের ডিসমিসালসংখ্যা যেমন ৩৫৫, তেমনি লিলির উইকেটসংখ্যাও ৩৫৫!

আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পছন্দ করতেন মার্শ। ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে টেস্টে শতক পেয়েছেন। খেলা ছাড়ার পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট একাডেমি প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন মার্শ। রিকি পন্টিং ও জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মতো কিংবদন্তিরা তাঁর পরিচর্যাতেই উঠে এসেছেন। নির্বাচকদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু ইয়ান চ্যাপেল চ্যানেল নাইনকে বলেছেন, ‘শুধু তার খেলার সামর্থ্যের জন্য নয়, রডনি স্পষ্টবাদী ছিল। আপনি তার চোখে কেমন, তা দ্রুতই বুঝিয়ে দিত। অনেকেই তাকে চিনত, সবাই হয়তো পছন্দ করত না কিন্তু সম্মানটা করেছে।' ক্রিকেট তাসমানিয়া মার্শের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতিতে বলেছে, ‘রড অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের আইকন। তার চলে যাওয়া বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যই বড় ক্ষতি।’

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান টেস্ট দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে রড অনেক বড় মাপের ব্যক্তিত্ব। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে প্রায় ৫০ বছরের মতো অসাধারণ সেবা করেছেন।’  অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানান, বড় হয়ে ওঠার পথে রডনি মার্শ ছিলেন তাঁর প্রিয় ক্রিকেটারদের একজন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে তাকে মনে রাখবেন সবাই।’ মার্ক ওয়া বলেছেন, 'রডনি মার্শ একজন ‘নিখাদ কিংবদন্তি। নির্বাচক হিসেবে তার সঙ্গে কয়েক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তার মতো সৎ, বিনয়ী এবং দয়ালু মানুষ হয় না।’

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...